বাড়তি নগরের
সাথে যুক্ত হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ বনায়ন। বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পেতে একদিকে সবুজ পৃথিবী
গড়ার প্রচেষ্টা চলছে যেমন অপরদিকে একই সাথে সবুজ পৃথিবী গড়ার অংশে চলছে শৌখিন সবুজ
বাগান তৈরী। সেটি তৈরী হচ্ছে নিচের অংশে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তৈরী হচ্ছে উপরী অংশে।
শৌখিন বাগানের সাথে যুক্ত হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজি বাগান।
নগরায়নের ফলে মাটির নিচের অংশে স্থান সংকুলান না থাকায় বাড়ীর ছাদ অংশে করা হচ্ছে শখের বশে অথবা শৌখিনভাবে কৃষি বাগান। ঠিক এমনিপরিবেশে শখের বশে বা শৌখিন ভাবে বাড়ীর ছাদকে ফেলে না রেখে পুষ্টির চাহিদা মিটাতে মৌসুম ভিত্তিক শীতকালিন সবজির মনোমুগদ্ধকর ছাদ বাগান তৈরী করেছেন বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় নিজ ভাবনের ছাদে জেলা প্রশাসকের নাজির মোঃ আল- মাসুদ করিম ও তার স্ত্রী অক্সফোর্ড স্কুলের পরিচালক মোসাঃ খাদিজা আক্তার মুন্নি।
তাদের নিজ ভাবনের ১৬৮০ স্কয়ারফিটের ছাদে বিভিন্ন টপ ও প্লাস্টিকের স্ট্রাকচার এর মধ্যে জৈব প্রযুক্তির নির্ভর রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত শীতকালিন সবজি টমোটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, ঝাল, পেয়াজ, রসুন, কলমীশাক, লালশাক, বীটকপি সহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। এছাড়াও রয়েছে ড্রাগন ফুল, কমলা, আমলকি, বরুই, মাল্টা, পুতিনাপাতা সহ অন্যান্য ফলগাছ রয়েছে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। সারি বদ্ধভাবে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে ছাদকে ক্ষতিনা করে টপের নিচে ফাঁকা রেখে বৃষ্টির পানি সরানোর ব্যবস্থা রেখে গোবরমাটি, কেঁচোকম্পোষ্ট ব্যাবহার করে সবজি চাষ করা হয়েছে। সবুজে সবুজে ভরা চেহারা যুক্ত স্বাস্থ্যবান গাছগুলি দেখলে মনমুগ্ধ হওয়ারই অবস্থা।
মোসাঃ খাদিজা আক্তার মুন্নী বলেন, এই ছাদ বাগানের সবজির স্বাদ অতুলনীয়। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন জৈব প্রযুক্তিতে তৈরী সকল সবজি। কোন কোন গাছে কোন সময় পোকার আক্রমণ ঘটলে নিমপাতা,ছাই, মেহগনি ফলের রস এসব স্প্রে করে থাকেন। বর্তমানে তার তিনটি কন্যা সন্তান ও স্ত্রী সহ ৫ সদস্যের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা সম্পূর্ণভাবে মিটেও ভবনের ভাড়াটিয়াদের একবারে কম চাহিদা মিটছেনা বলে মতপ্রকাশ করেন। এছাড়া বারো মাস মৌসুম ভিত্তিক সবজি চাষ করার জন্য ছাদে তিনি পাইপের মাধ্যমে চাহিদা ভিত্তিক সেচ দিয়ে থাকি। বাড়ীর নিচের অংশের পাশাপাশি উপরি অংশে এক ইঞ্চিও জায়গা ফেলে রাখার কোন যুক্তি নাই সবটাই এখন কাজে লাগিয়ে ভাল ফসল ফলানো সম্ভব।
মোঃ আল-মাসুদ
করিম বলেন, ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল এরকম একটি ছাদ বাগান করার এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে
আমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে আমার টার্গেট পূরন করতে পেরেছি। ছাত্র জীবন থেকেই
ভালোবাসি সবুজ প্রকৃতি, সবুজ প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে ওঠা। তাই এই দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতিকে
আকড়ে ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। নিজেদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে গাছ গুলোর যত্ন করছি নিজের
সন্তানের মত করে। প্রতিদিন ছাদে আসতে না পারলে সেদিন মনে হয় যেন আমার ভালো কাটে না।
যথাযথ পরিশ্রম করে পরিচর্যার মাধ্যমে বর্তমানে মৌসুমি ফল, সবজি নিজের ছাদ বাগানের গাছ
থেকেই খেতে পারছি।
আরো বলেন, আমার ছাদ বাগানে কয়েক শতাধিক গাছ আছে। এসব গাছ ভবন করার সময় আমি টব তৈরি করে নিয়েছি। এছাড়াও লোহার স্ট্রাকচার, তেলের ড্রাম, সিমেন্ট, মাটির বড় বড় টব করে রাখা হয়েছে। ছাদের কোন গাছে কীটনাশক ব্যবহার করি না। প্রতিটি গাছে জৈব সার ও জৈব ভালাই নাশক ব্যবহার করি। আমাদের এই ছাদবাগান দেখে প্রতিবেশীদের মাঝেও বেশ উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রকৃতিপ্রেমী
সাংবাদিক, অ্যাড. সোহেল হাফিজ বলেন, বর্তমানে শহরে ছাদ বাগান আর গ্রাম পর্যায়ের ছাদ
বাগানের মধ্যে কিছুটা হলেও পার্থক্য রয়েছে। মাটির অস্থিত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে ফলে
ছাদ বাগান ছাদের বেলকুনিতেও শখের বশে বা শৌখিনভাবে অনেকে সবজি চাষ, ফুলের চাষ করছেন।
এক্ষেত্রে ছাদ বাগানে মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করা হলে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে
ব্যাপক ভূমিক রাখবে বলে তিনি মতামত প্রকাশ করেন।
বরগুনা কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ছাদ বাগান তৈরীর
ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দিক লক্ষ্য রাখা উচিত যেমন ছাদ টি মজবুত কিনা , ওজন বহন করার মত
ছাদের সক্ষমতা রয়েছে কিনা। সেচ দেওয়া পানির ব্যবস্থা রয়েছে কিনা এবং পানি নিস্কাসনের
ব্যবস্থা রয়েছে কিনা। ছাদ বাগান তৈরীর জন্য দৃঢ় মনোবল দরকার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য
এবং ভাল উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিকল্পনার দরকার।
ছাদ বাগান নতুন
কোন বিষয় নয়। বহু আগে থেকে এটি চলে আসছে। তাই পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করে পারিবারিক
পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ব্যানিজ্যিকভাবেও ছাদ বাগানের মাধ্যমে লাভবান হওয়া
যায় বলে অনেকে মতামত প্রকাশ করেন।