জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা করার কারণ জানিয়েছে প্রধান আসামী আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) গ্রেপ্তার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে সোহেল হত্যার কারণ জানিয়েছে বলে সংস্থটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। একইসঙ্গে সোহেল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দেন আশীষ।
বুধবার কাওরানবাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রধান আসামি আশীষ জানান, বনানীর আবেদীন টাওয়ারে ১৯৯৬ সালে আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরঢে বান্টি ইসলামের সঙ্গে যৌথভাবে ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোরাত পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হত। ক্লাবটি এক পর্যায়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের আখড়ায় পরিণত হয়। এই ক্লাবেই সবচেয়ে ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। ক্লাবে বসেই তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিটিং করতেন। এই সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে বান্টি ও আশীষের সখ্যাতা গড়ে উঠে এবং পরবর্তীতে এই তিনজনই ট্রাম্পস ক্লাব ব্যবহার করে আন্ডারওয়ার্ল্ডেও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
র্যাবের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ জানান, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তিনি মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সখ্য তৈরি হয়। এই তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ বলেছেন, ট্রাম্পস ক্লাবের পাশে বনানী জামে মসজিদ ছিল। সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের নানা অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসব কারণে চিত্রনায়ক সোহেল চৌদুরীর সঙ্গে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে দ্বন্ধ শুরু হয়। এসময় তিনি বান্টি, আশীষ, আজিজ, তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর তর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ আরও জানায়, প্রকাশ্যে আজিজকে অপমান করায় সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে তিনি (আশীষ) ও বান্টি একটি পরিকল্পনা করেন। ক্লাবে ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন বান্টি, আশীষ ও আজিজ শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দিয়ে সোহেলকে হত্যার প্রস্তাব দিলে ইমন রাজি হয়। পরে ইমন এই হত্যাকান্ড সম্পন্ন করে।
এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি।
২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করেন। আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। গত ২৮ মার্চ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।