“স্বাস্থ্যসেবা খাতে চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা” এই স্লোগান দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক সংগঠন সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাবৃদ্ধি এবং হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গণশুনানি শীর্ষক জবাবাদিহিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগে সেবাগ্রহীতাদের নিয়ে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি সম্ভাব্য সব ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের পক্ষে অঙ্গীকার করেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অজয় দাশের সভাপতিত্বে ও সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সদস্য প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অজয় দাশ।
কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ও সনাক-টিআইবি’র দেশব্যাপী চলমান দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে ধারনা প্রদান করেন সনাক-টিআইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কে এম আশিক কামাল।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. আবুল বাশার, ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ মোঃ ফয়েজ আহমদ, পরিসংখ্যানবিদ শওকত আল-আমীন চৌধুরী, সেবা তত্ত্বাবধায়ক রেশমী দাস, সিনিয়র স্টাফ নার্স মনোয়ারা বেগম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সনাক চট্টগ্রামের সদস্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির যুগ্ম আহবাযক অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস, রওশন আরা চৌধুরী ও এস এম ফরহাদ উল্লাহ প্রমুখ।
উক্ত অনুষ্ঠানে সেবাগ্রহীতাগণ হাসপাতালে সেবা নিতে এসে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সেসব বিষয় কর্তৃপক্ষকে সরাসরি প্রশ্ন করার মাধ্যমে সমাধান কামনা করেন। রোগীদের উত্থাপিত সমস্যাসমূহ ছিল, হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ না থাকা ও বেশির ভাগ পরীক্ষা বাহির থেকে করানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, সিটি স্কেন যন্ত্র ও এমআর আই যন্ত্র স্থাপন, ঔষধ সরবরাহ কম, আয়াদের বিভিন্ন অনিয়ম, রোগীদের সরবরাহকৃত খাবারের মান খারাপ, ভর্তি রোগীর সীট ব্যবস্থপনায় অনিয়ম। শিশু ওয়ার্ডে রাতের বেলায় ডিউটি ডাক্তার না, নেবুলাইজার মেশিন এর স্বল্পতা ইত্যাদি। পাশাপাশি জলাতঙ্ক টিকার ক্ষেত্রে বকশিস এর অভিযোগ করলে তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় নাম দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
সেবাগ্রহীতাদের এসব প্রশ্নের জবাবে কর্তৃপক্ষ বলেন, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা আমাদের অতিথি, তাদের উন্নত সেবা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য মনে করি। হাসপাতালে অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের ভালো সেবা দিতে আমরা তৎপর রয়েছি। রোগীদের সাথে এখানকার ডাক্তারদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো।
কর্তৃপক্ষ আরো বলেন, কাগজে কলমে ২৫০ শয্যার হলেও ১৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে হাসপাতালে সেবা দিতে নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে প্রায় দু’শতাধিক রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকে। ফলে আন্তরিকতা থাকা স্বত্বেও রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া সবসময় সম্ভব হয়ে উঠছেনা। এছাড়াও বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ওয়াসা, পিডব্লিউডিসহ সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বারবার তাগাদা দেয়া স্বত্তেও পর্যাপ্ত ও দ্রুত সহযোগীতা পাওয়া যায় না।
কর্তৃপক্ষ আরো বলেন, রোগীদের যত্রতত্র ময়লা ফেলা এবং পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় এতোবড় হাসপাতালের সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বল্প সংখক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। কর্তৃপক্ষ বলেন, ডাক্তারদের সম্মাননা হচ্ছে চিকিৎসা শেষে ঘরে ফেরার সময় রোগীর হাসিমুখ। আমরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীদের হাসিমুখে বাড়ি পাঠাতে চাই। এজন্য রোগীদেরকেও সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের নিজের বাড়ীর মত করে যত্নবান হতে হবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবেনা।
সভাপতির বক্তব্যে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়স (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অজয় দাশ বলেন, এ হাসপাতালের ডাক্তারসহ সকলেই সবসময় আন্তরিক থাকে রোগীদের ভালো সেবা দেয়ার জন্য। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আজকের কর্মসূচী স্বার্থক কেননা আমরা রোগিদের সাথে সরাসরি বসে তাদের সমস্যার কথা শুনার মাধ্যমে অনেক কিছু সমাধানের ব্যবস্থা বের হয়ে আসছে। বাংলাদেশের খুব কম হাসপাতালেই আছে সেবার মান পর্যবেক্ষণে এই ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করে। পাশাপাশি বিগত সময়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আউটসোর্সিং এর স্টাফ ক্লোজ করার বিষয় অবহিত করেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিশেত অন্তঃবিভাগে কোথাও কাউকে টাকা, বকশিস না দেওয়ার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন।
সনাক-টিআইবি’র সহযোগিতায় আমরা নিয়মিতভাবে রোগিদের কথা শুনছি এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করছি। রোগীরা যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি সেবার মান উন্নয়নে নাগরিক সমাজ ও রোগীদের সহযোগিতা কামনা করেন।