চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প যানজট নিরসনে চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পও শেষের পথে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
চলতি বছরের নভেম্বরের চালু হবে নগরীর বৃহৎ ফ্লাইওভার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পের ৭ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংসহ অন্যান্য কাজ শেষ পথে রয়েছে। ফ্লাইওভার চালু হলে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পৌঁছে যাবে মানুষ। এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে প্রবাসীরা ভোগান্তি ছাড়াই বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবেন।
বাণিজ্যিক রাজধানীতে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজও চলছে।বর্তমানে লালখান বাজার মোড়ে চলছে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। সেখানে একটি র্যাম্প নেমে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যোগসূত্র স্থাপন হবে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশের বেশি এগিয়েছে। শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে বন্দর এলাকার নিমতলা পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষ। আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, শেখ মুজিব সড়ক ও টাইগারপাস এলাকায় নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ফ্লাইওভারে উঠা-নামার জন্য ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, মূল ফ্লাইওভারের সাথে ১৪টি র্যাম্প থাকবে। এসব র্যাম্পের মাধ্যমে বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষ ফ্লাইওভারে উঠা-নামা করতে পারবে। বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মূল ফ্লাইওভার চালু করা। মূল ফ্লাইওভার চালু হলে আমরা র্যাম্প নির্মাণের কাজ করবো। মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে আমরা এখন র্যাম্পের কাজ করছি না।
সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প লালখান বাজারে নামবে, সেটি ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এখন সে অংশের কাজ চলছে। আগ্রাবাদ থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। অন্য কাজগুলো অনেকটা এগিয়েছে।আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ফ্লাইওভার কাজের পরেই র্যাম্প নির্মাণে কাজ করা হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার কাজ চলমান। ফ্লাইওভার নির্মাণে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। বর্তমানে সব বাধা কাটিয়ে কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
আগামী নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর পরই ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। নগরীর যানজট চাপ কিছুটা কমবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিমানবন্দর কেন্দ্রিক যানজট নিরসন হবে জানান সিডিএ সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাঙ্কিনকে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন করা হয়।
তারপর আরও এক বছর বাড়ানো হয়। সবশেষ তা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সাথে এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ, টোল প্লাজা নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, সাউন্ডপ্রুফ ব্যারিয়ার স্থাপন ও বৈদ্যুতিকপুল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারণার চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।