চট্টগ্রাম জেলায়
ব্যক্তিগত ও ঘটপূজাসহ এবছর মোট ২,৪৮৩টি পূজামন্ডপে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত
হবে। চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান পূজা মন্ডপ জেএম সেন হলসহ এবার ১৬টি থানায় পূজা মন্ডপের
সংখ্যা ২৯৩টি ও জেলায় ২১৯০টি পূজা মন্ডপের মধ্য ঘটপূজা হবে ১৬৬৪টি। গতবছরে চেয়ে কিছু
পূজা মন্ডপ বেড়েছে।
আগামী ২০ অক্টোবর
(শুক্রবার) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২৪ অক্টোবর
(মঙ্গলবার) বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসবের সমাপ্তি হবে।
দূর্গা পূজাকে
সামনে রেখে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পূজা
উদযাপন কমিটি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। এবছর পূজা মন্ডপ বাড়ায় দুর্গোৎসব জমজমাট হবে মনে
করছেন বলে পূজার্থীরা। সাত্ত্বিকভাবে পূজা উদযাপনের জন্য মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ
এবার পূজা মন্ডপগুলোতে ডিজে অনুষ্ঠান ও হিন্দি গান না বাজানোসহ বেশকিছু কঠোর সিদ্ধান্ত
নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও পূজাকে নির্বিঘ্ন করতে এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। মহানগরসহ জেলার সব পূজা মন্ডপে অবয়ব ও রংতুলির, মঞ্চ ও প্যান্ডেল, লাইটিংয়ের কাজ চলছে।
শিল্পীর তুলিড় আঁচড়ে উদ্ভাসিত মা দেবী দুর্গা বসত গড়ছেন চট্টগ্রাম নগরী, গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়। বাঙালির যেন মায়ের জন্য উৎসবের ধুম লেগেছে। নানা রঙে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজবে বিভিন্ন পূজা মন্ডপ। সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
বিভিন্ন শপিং
সেন্টার, মার্কেটে পূজার কাপড়, গয়না কেনা প্রস্তুতি চলছে। সব পূজা মন্ডপে এখন চলছে
উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। তুলির আঁচরে প্রাণ পেয়েছে দুর্গাপ্রতিমা।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশিষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দূর্গা পূজাকে প্রাণবন্ত, সুন্দর ও নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি চলছে। সাত্ত্বিকভাবে মায়ের আগমনী ও পূজার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করবো। এই বছর কিছু পূজা মন্ডপ বেড়েছে। গত সারা বাংলাদেশে প্রায় পূজা মন্ডপে হামলা ও আতংক সৃষ্টি হয়েছিল। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সবাইকে সর্তক থাকা প্রয়োজন, যাতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে, যাতে সুষ্ঠুভাবে পূজা সম্পন্ন করতে পারি। সব পূজা মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও থাকবে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, সাত্ত্বিকভাবে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের চাওয়া
মন্ডপে কোনো ধরনের ডিজে অনুষ্ঠান এবং মাইকে হিন্দি গান বাজানো চলবে না।
আমাদের নির্দেশনা
ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবেও কিছু নির্দেশনা রয়েছে। প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপের কাছে নির্দেশনা
মেনে পুজা করার অনুরোধ করছি।
চসিক পূজা মন্ডপ
সূত্রে জানা যায়, এবার ধুনোচি নাচ, গীতা পাঠ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতার আয়োজন
করছি। চন্ডী পাঠের আসর করবে, যেটা আমরা ছোটবেলায় মহালয়ার সময় শুনতাম।
চট্টগ্রাম জেলা
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত বলেন, জেলায় মোট ২ হাজার ১৯০টি
প্রতিমা ও ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘে পূজা উদযাপন করতে
পারে সেজন্য সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অবহিত করা হয়েছে আইন
শৃঙ্খলা বাহিনীকে। পূজা চলাকালীন পূজা মন্ডপে দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। তারা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সকলের সহযোগিতায় সর্বাঙ্গীন সুন্দরভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলেই আশা করছি।
এদিকে নগরীর
সদরঘাট, দেওয়ানজী পুকুর পাড় ও গোয়ালপাড়ায় প্রতিমা কারিগরের কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে,
পূজার জন্য মায়ের মূর্তি সাজাতে এখন চট্টগ্রামের মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত। নগরীর বিভিন্ন
মৃৎশিল্পী পাড়ায় রংতুলির আঁচড়ে প্রাণ পাচ্ছে মায়ের প্রতিমা। পরানো হবে শাড়ী, গয়নাগাটি।
মাটির তৈরি মূর্তি মৃৎশিল্পীদের রংতুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠছে।
মৃৎশিল্পীরা জানায়, অজন্তা ধাঁচের মূর্তির চাহিদাও থাকে বেশি। এ ধরণের মূর্তিতে শাড়ি, অলংকার ও অঙ্গসজ্জা সবই করা হয় মাটি ও রঙ দিয়ে। বাংলা প্রতিমায় শাড়ি, অলংকার, সাজসজ্জার উপকরণ আলাদাভাবে কিনে নিতে হয়।
এদিকে নগরী
ও জেলার বিভিন্ন স্থানের পূজামন্ডপগুলোতেও এখন চলছে আয়োজনের প্রস্তুতি। বানানো হচ্ছে
মন্ডপ, তোরণ। বিভিন্ন জায়গার পাকা মন্দিরগুলো রং আর কাপড়ের বাহারি সাজে সাজছে। গান,
নাচ, আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটকের মধ্য দিয়ে বর্ণিলভাবে উৎসব পালনের জন্য চলছে
মন্ডপ প্রস্তুতি।
প্রতি বছরের
মত এবারও ভিন্ন ধরনের চমক নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে নগরীর হাজারী লেইন, পাথরঘাটা,
ঘাটফরহাদবেগ, সদরঘাট, নালাপাড়া, রাজাপুকুর লেইন, চট্টেশ্বরী বাড়ি, মোমিন রোডসহ নগরীর
বিভিন্ন মন্ডপে।
নগরীর বাইরে
পটিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী উপজেলার মাতৃমন্দির, জ্যেষ্ঠপুরা গ্রাম, কেলিশহর,
দক্ষিণ ভূর্ষি, সুচক্রদন্ডী, গহিরা, নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে বর্ণাঢ্য পূজার আয়োজন
করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নগরী ও জেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।