ঢাকা জেলার
ধামরাই উপজেলার নান্নার ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বিলজুড়ে শুষ্ক মৌসুমে আবাদ হয় ধান ও নানা
ধরনের সবজি। আর যেখানে পানি থাকে সেখানে মেলে মাছ। তবে মানুষগুলো বিপদে পড়েন বর্ষা
মৌসুমে। পুরো বিল পানির নিচে থাকায় বেকার হয়ে পড়ে নিম্নআয়ের পরিবারগুলো। বর্ষার থৈ-থৈ
পানিতে জন্মানো শাপলায় মনোহারী হয়ে ওঠে পুরো বিল। এই শাপলাই এখন হয়ে উঠেছে কর্মহীনদের
জীবিকার অবলম্বন। বিলের শাপলা তুলে তা বিক্রি করে চলছে কয়েকটি পরিবার। স্থানীয় হাটের
পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে এ শাপলা।
উপজেলার বিভিন্ন
ইউনিয়নের পানিতে তলিয়ে যাওয়া চক ও বিভিন্ন বিল ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমি,খাল-বিলগুলোয়ও
শাপলা জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। শাপলা তুলতে
প্রতিদিন ভোর থেকেই বিলে নেমে পড়েন কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও। ছোট ছোট ডিঙি
ও কোষা নৌকায় বিলজুড়ে ছুটে বেড়ান তারা।বিভিন্ন গ্রামের চক ও বিলে ব্যস্ত থাকেন শাপলা
তুলতে। দুপুর ও বিকেল বেলায় নৌকাভর্তি শাপলা নিয়ে ফেরেন তারা। এর পর বিভিন্ন গ্রামের
রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। পাইকাররা সেখান থেকে কিনে ট্রাক ও পিকআপে ঢাকার বিভিন্ন
বাজারে নিয়ে যান। সবজি হিসেবে শাপলার জুড়ি মেলা ভার। শুধু বর্ষায় মেলে বলে চাহিদাও
থাকে বেশি। রঘুনাথপুর বিলের শাপলার কদর বেশি।
স্থানীয়রা
জানান, কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বর্ষাকালে বিভিন্ন বয়সের অনেক মানুষ এ কাজে যুক্ত
হন। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। শাপলা সংগ্রহকারীরা নৌকা
নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। বিস্তীর্ণ এলাকায়
বর্ষা মৌসুমে অনেক শাপলা হয়ে থাকে। শাপলা বিক্রি করে একজন ব্যক্তি দিনে ৬০০ থেকে ৮০০
টাকা আয় করতে পারে ।
কয়েকজন শাপলা
সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা শাপলা সংগ্রহ করতে
পারে। পাইকারেরা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে কিনে একত্র করেন। দিন শেষে একেক
জন ব্যক্তি সংগৃহীত শাপলা বিক্রি করে সাতশো থেকে একহাজার টাকা আয় করে থাকেন।
উপজেলার নান্নার
ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মোঃ জসিম বলেন, শুকনাকালে ইট বালুর
ট্রাকে কাজ করে সংসার চালান আর বর্ষাকালে আমাদের চারপাশে পানি থাকে। কোথাও কোনো কাজ
থাকে না। বেকার বসে থাকেতে হয়। তাই এই সময় বসে না থেকে বিল থেকে আমি আর আমার ভাই দুই
জন মিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাপলা তুলে মোঠা বেধে বাইপাইল বাজারে পাইকার বিক্রি
করি, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি করি , গাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাদে
আমরা দুজনেই ভাগ করে নেই, আর সেই টাকা দিয়েই সংসার চালাই।
একই গ্রামের
দিনমজুর মো. মিরাজ বলেন, বর্ষায় একদম বেকার হয়ে পড়েন। তবে শাপলা তুলে সংসার চালানোর
পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছেন। প্রতিদিন তিনি ৭০০ থেকে হাজার টাকা রোজগার করেন।
পাইকার আয়নাল
হক জানান, স্থানীয়দের কাছে শাপলা কিনে তিনি পিকআপে করে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ
করেন। প্রতি আঁটি শাপলা কেনেন খুচরা ১৪ থেকে ১৬ টাকায় আর ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন
২০ থেকে ২৫ টাকায় ।
ধামরাই উপজেলা
কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে মৌসুমে
শাপলা উৎপাদন হয়ে থাকে। এসময় বেকার ও নিম্ন আয়ের মানুষ শাপলা বেচা কেনার সঙ্গে জড়িত।
শাপলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি, শাপলায় প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ থাকে। এছাড়াও
শর্করা, ক্যালসিয়াম, আমিষ পাওয়া যায় শাপলা থেকে। শাপলা তরকারি হিসাবেও খুবই মজাদার।