একদিনে ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বৃহস্পতিবার
সকাল পর্যন্ত মশাবাহিত এ রোগে ঢাকার বাইরে এই দুইজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুর প্রকোপের মারাত্মক বিস্তারে এ বছর মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে এটি রেকর্ড। এর আগে শুধু এক বছরে নয়, আগের সব বছর মিলিয়েও ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।
প্রাণহানির পাশাপাশি এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও ছিল অন্য বছরগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেশি। সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন।
মশাবাহিত এ ভাইরাস এবার ঢাকার ও বাইরের
এলাকায় ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। বর্ষার মৌসুমেই শুধু নয়, বছরজুড়েই এ রোগের প্রকোপ
দেখা গেছে। এর সঙ্গে এ ভাইরাসের ধরনও বদলেছে। সবমিলে এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা
বেড়েছে।
দেশে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে
কখনো এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এবার মশাবাহিত এ রোগ সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে
মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও
অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেননা এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্যই
দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর বাইরে অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সবমিলিয়ে এ বছর এডিস মশাবাহিত এ রোগে হাসপাতালে
ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেন ১ লাখ ৯ হাজার ৯২৭ জন। ঢাকা শহরের
বাইরে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ, ২ লাখ ১১ হাজার ১৮ জন।
এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ৬২ হাজার
৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই সময় মৃত্যু হয়েছিল ২৮১ জনের। এর আগে ২০১৯ সালে
দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এর
আগে এক বছরে সর্বোচ্চ ভর্তি ছিল। সরকারি হিসাবে সেই বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত একদিনে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২ জন এবং ঢাকায় এ সংখ্যা ২৮ জন। এ বছর সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০১ জন; যার মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ৯৭৮ জনের; ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ৭২৩।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ৮৬৭ জন রোগী। তাদের মধ্যে ২৮১ জন ঢাকায় এবং ৫৮৬ জন ঢাকার
বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
মাসের হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে
হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন,
মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ জন, জুলাইয়ে ৪৩ হাজার ৮৭৬ জন, আগস্টে ৭১
হাজার ৯৭৬ জন, সেপ্টেম্বরে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং অক্টোবরে ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন, নভেম্বর
মাসে ৪০ হাজার ৭১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ডিসেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে ভর্তি রোগীর
সংখ্যা ৯ হাজার ৫৪ জন। মাসওয়ারি মৃত্যুর হিসাবে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন,
এপ্রিলে দুইজন, মে মাসে দুইজন, জুনে ৩৪ জন, জুলাইয়ে ২০৪ জন, অগাস্টে ৩৪২ জন, সেপ্টেম্বরে
৩৯৬ জন, অক্টোবরে ৩৫৯ জন এবং নভেম্বরে ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়। ডিসেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে
৭৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।