আজঃ মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩
শিরোনাম

দেশে করোনা সংক্রমণের তিন বছর : মহামারির শেষ কোথায়

প্রকাশিত:শনিবার ১১ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:শনিবার ১১ মার্চ ২০২৩ | ৩৬৫জন দেখেছেন
স্বাস্থ্য ডেস্ক


Image

দেশে করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে কয়েক মাস ধরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে রয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দুই বছরে ধরন পাল্টে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ভাইরাসটি। তবে দ্বিতীয় বছরের শেষদিকে সংক্রমণ কমে আসার পর অনেকের ধারণা ছিল- বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে মানুষ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করে ঝড়ের গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন। দেশে এখনও ওমিক্রণ সংক্রমণ চলছে। এ অবস্থায় সবার প্রশ্ন- করোনা মহামারির শেষ কোথায়?

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, খুব শিগগিরই করোনা মহামারি নির্মূল হবে- এটি বলা যাবে না। গত ১০০ বছরে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ভাইরাসের মহামারি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একমাত্র ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নির্দিষ্ট সীমানায় মহামারি রূপ নিয়ে শেষ হয়েছিল। আর কোনো ভাইরাসের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। অন্যান্য ভাইরাসের সৃষ্ট মহামারি এক থেকে তিন বছর স্থায়ী ছিল। এরপর তা মৌসুমি রোগ হিসেবে রয়ে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি গুরুতর করেনি। সেই বিবেচনায় হয়তো অনেকে মনে করেন, চলতি বছরই করোনা মহামারি শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, যখনই ভাইরাস ব্যাপক ট্রান্সমিশনে থাকে তখন সেটির তত বেশি মিউটেশনের সম্ভবনা তৈরি হয়, ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার শক্তিশালীও হতে পারে। এ কারণে মহামারি শেষ হচ্ছে কিনা, সেটি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

বিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করেন, কোভিড পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্মূল হবে। তাদের যুক্তি- পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় ইবোলা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। এখন প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে। করোনাও এমন হবে অথবা এটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে সর্দি, কাশি, হাম, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার মতো রয়ে যাবে। কারও কারও মতে, এন্ডেমিন রোগ সব সময় দুর্বল হয় না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের মহামারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আজরা গানির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, কিছু এন্ডেমিক রোগ আছে যাতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। স্মলপক্স কয়েক হাজার বছর ধরে এন্ডেমিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এতে এখনও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। ম্যালেরিয়াও এন্ডেমিক রোগ, যাতে বিশ্বে বছরে প্রায় ছয় লাখ মানুষ মারা যায়।

আজমা গানি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিও হয়তো এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাবে। কিন্তু একটু সময় লাগছে। একসঙ্গে সব দেশে টিকাকরণ হয়নি। কেউ আগে কেউ পরে শুরু করেছে। তবে টিকাকরণের ফলে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারছে। তবে যদি নতুন ধরন আসে তাহলে এই পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। ফলে চলমান মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র হবে টিকা।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রথম বছরে কয়েকবার জিন বদলেছে। নিজেদের সীমানায় চীন ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক সফলতা পেলেও সবশেষ দেশটিতে নতুন সংক্রমণ কম ভোগায়নি। ফলে এখনই বলা যাবে না ভাইরাসটি কবে নির্মূল হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের জিন পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষণীয়। এক ভেরিয়েন্ট শেষ হতে না হতেই আরেক ভেরিয়েন্ট চলে এসেছে। তবে ওমিক্রন রূপ বদলালেও বাংলাদেশে নতুন অন্য ধরন শনাক্ত হয়নি, সংক্রমণও কম। কিন্তু চীনে হয়েছে। ফলে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করাও জরুরি।


আরও খবর