চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা ২০২৪-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হোটেল আগ্রাবাদের ইছামতি হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গ্রেড-১ (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) মো: মাসুদ সাদিক, সদস্য (করনীতি) এ.কে.এম বদিউল আলম।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিএমসিসিআই’র সহ-সভাপতি এ.এম. মাহবুব চৌধুরী, কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কমিশনারবৃন্দ, সিএমসিসিআই পরিচালক ও সদস্যবৃন্দ এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, কর হার কমানো, কর প্রদান সহজীকরণ ও ফাঁকির প্রবণতা বন্ধ করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা সে পথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। অনুশীলন করছি। আপনারা আস্থা রাখতে পারেন, চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা ব্যবসা বাণিজ্যের সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে বিকাশ ঘটাতে হবে।
সিএমসিসিআই’র পক্ষে সূচনা বক্তব্য পাঠ করেন সিএমসিসিআই সভাপতি খলিলুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই আমরা ব্যবসায়ী শ্রেণী নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তার ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সকলকে নিজ ক্ষেত্র থেকে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির টাল-মাটাল অবস্থার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এখনও সমুন্নত রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধি লাভ করবে, যা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে। যা দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগনের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র নিজের ব্যবসায়িক দিক চিন্তা না করে সামাজিক দায়বদ্ধতার লক্ষ্যে দেশের সাধারণ জনগনের জীবন জীবিকার মান যাতে আরও সহজলভ্য হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কিছু ব্যবসায়ীর অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম বেড়ে চলছে, সে ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি।
২০২৪-২৫ ইং সালের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর আইন, ভ্যাট এবং কাস্টমস আইনের বিধানকে আরও সহজ, গতিশীল ও করদাতা বান্ধব করার জন্য খাতওয়ারী সুপারিশ করা হলো- বর্তমান আয়কর আইনে, তৈরী পোষাক শিল্পের মোট রপ্তানী প্রাপ্তির কর হার ১% হতে কমিয়ে .২৫% করা হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) দেশের অপার সম্ভাবনাময় আই.সি.ডি সেবা খাতের জন্য উৎসে অগ্রিম কর ৮% হতে কমিয়ে ৫% করার প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে বিদ্যমান কোম্পানীর নূন্যতম কর হার (লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে .৬০% টাকা) যাহা মৌলিক আয়কর আইন ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। নূন্যতম কর হারের বিধান বাতিল করা দরকার। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর বিদ্যমান কর হার ২৭.৫০% কর হতে কমিয়ে ২৫% করার বিধান করা। রপ্তানীমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট নিরীক্ষার নামে অহেতুক হয়রানী বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দেশের ইস্পাত শিল্পে বিদ্যমান উৎসে অগ্রিম ভ্যাট হার ৩% হতে কমিয়ে ১% হারে উন্নীত করা। ভ্যাট প্রত্যার্পন সহজ ও করদাতা বান্ধব করা। ভ্যাট আপীলাত ট্রাইবুনালে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ২০% হারে কর পরিশোধের বিদ্যমান বিধান কমিয়ে ৫% এ নির্ধারন করা। বিভিন্ন এস.আর.ও এর বিপরীতে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ভ্যাটের বিভাগীয় কর্মকর্তা হতে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করার নামে হয়রানিমূলক কার্যক্রম কমিয়ে আনা। হোম কনজাম্পশন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বন্ডের আমদানি প্রাপ্যতা থাকা সত্ত্বেও বন্ডেড সুবিধা ব্যতিরেকে কাস্টমস্ কমিশনারের অধীনে ক্যাশ ডিউটি দিয়ে পণ্য আমদানি করার প্রক্রিয়া বন্ধ করা। এ্যালুমিনিয়াম এ্যালয় যার চুক্তির আওতাধীন এইস.এস.কোড. ৭৬০১.২০.৯০ করলে আমদানি সহজীকরণ হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে উন্নয়নের মহোৎসব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তি, খেলাধুলা, পর্যটন, সমুদ্র অর্থনীতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রেই সাফল্যের সঙ্গে উন্নয়ন করে চলেছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হয়েছে। অনেক উন্নয়নমূখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে তা কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সহ বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি আরও উচ্চতর শিখরে নিয়ে যাবে।