ধামরাই ( ঢাকা) প্রতিনিধি:
ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলায় বেড়েছে গাজরের আবাদ। চলতি মৌসুমে উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের বিস্তির্ণ কৃষি জমিতে গাজরের চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছে গাজর চাষিরা।
উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচড়, বহুতকুল, কাংশায় মোট ৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ২০ হেক্টর বেশি। আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়। আর এই ভালো ফলন দেখে এখন অনেকেই এই গাজর চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
গাজর চাষিরা জানান, গাজর চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোঁআশ মাটি উপযুক্ত। গাজর চাষকৃত জমি মূলত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীর করে চাষ করতে হয়। কেননা, গাজরের শেকড় অনেক গভীরে প্রবেশ করে। এ জমি একাধিকবার চাষ করা আবশ্যক। তাই তিন থেকে চারবার চাষ করে নেওয়া প্রয়োজন। এরপর মই দিয়ে সমান করে নিয়ে জমি খুব ভালোভাবে তৈরি করার মাধ্যমে মাটি ঝুরঝুরে অবস্থায় বীজ বপন করতে হয় ।
এছাড়াও তারা আরো বলেন, গাজরের বীজ সারিবদ্ধভাবে বপন করতে হয়। জমিতে বীজ বপনের আগে গাজরের বীজ একদিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। মাটি উত্তমরূপে তৈরি করে ২৫ সেমি ব্যবধানের সারি করে সারিতে বীজ বুনতে হয়। বীজ খুব ছোট বলে ছাই বা গুঁড়ো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে বপন করা ভালো। দুই থেকে তিন ইঞ্চি দূরে দূরে বীজ বপন করতে হবে। বীজ গজানোর পর চারা একটু শক্ত হলে পর্যায়ক্রমে চারা পাতলা করে দিতে হয়। এতে চারা থেকে চারার দূরত্ব পাঁচ সেমি হলে গাজর খুব ভালো হয়। প্রতিটি বেডের প্রস্থ হতে হবে এক মিটার করে। দুই বেডের মাঝে সেচ দেওয়া ও পরিচর্যার জন্য ২০ সেমি গভীরতাবিশিষ্ট ৩০ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে।
তবে এমন পদ্ধতি থাকলেও কোনো নিয়ম অনুসরণ না করে শুধুমাত্র জমিটি প্রস্তুত করে বীজগুলো ছিটিয়ে দিয়েই আমরা চাষ করি। এছাড়া অন্যান্য পরিচর্যা সময়মতে করে এচাষে সফল হওয়া যায়। তবে পরবর্তীতে এই সব নিয়মকানুন অনুসরণ করে ভালো ফলনের জন্য আরো ব্যাপক হারে চাষাবাদ করার পরিকল্পনা করছেন তারা।
কৃষক মোঃ বাতেন খান বলেন, আমাদের এই উপজেলায় আগে গাজরের চাষ তেমন হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি ৪০ শতাংশ জমিতে গাজর চাষ করি। তবে প্রথমে আমার বিশ্বাসই হয়নি। পরে অফিসের কথা রাখতে গিয়ে এই অল্প জমিতে গাজর চাষ করে আমি সফল হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ মণ গাজর হয়েছে । প্রতি কেজি গাজর ২০টাকা দরে বাইপাইল আরদে পাইকারী বিক্রি করছি । এটি মুলার মতোই মাটির নিচে পরিপূর্ণ বিকাশ হয়। মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে উদ্ভিদগুলো সমৃদ্ধি লাভ করে তার ফল বৃদ্ধিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এখন অন্যান্য কৃষকরাও আমার থেকে পরামর্শ নিচ্ছে।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, রোয়াইল ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর জায়গায় গাজরের আবাদ হয়েছে। আগে গাজর চাষ নিয়ে কৃষকরা তেমন চিন্তা-ভাবনা করতেন না। কিন্তু রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচড়, বহুতকুল, কাংশা গ্রামের অলসংখক কৃষককে উদ্বুদ্ধ করি। তারা অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি গাজর চাষ করে এখন সফল। এটি দেখে পার্শ্ববর্তী চাষিরাও এখন গাজর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।