শ্রীলেখা মিত্র
তখন নবম কি দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা সন্তোষ মিত্রের ঘর থেকে প্রথম চুরি করে ধূমপান!
অভিনেত্রীর কথায়,
সেই প্রথম সুখটান। মনে হয়েছিল যেন স্বর্গ সুখ! সেই সুখ আপাতত অ-সুখের কারণ হয়েছে তাঁর!
‘অভিযাত্রিক’ ছবির ‘রাণুদি’ ফ্যাসফ্যাঁসে গলায় বলেন, কথা বলতে কষ্ট
হচ্ছে। গলায় সারাক্ষণ অস্বস্তি। দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
সারাক্ষণ বুকে
যেন চাপ ধরা ভাব। ফুসফুসে যেন বাতাসের অভাব! শ্রীলেখা জানেন, তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলেই
সবার আগে তাঁকে ধূমপান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তাই নিজেই সেই রাস্তায় হাঁটবেন বলে
ঠিক করেছেন। অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁর ভাবনা, আর নয়! এ বার সত্যি সত্যিই
ধূমপান ছাড়বেন তিনি।
ধূমপান নিয়ে শ্রীলেখার
ঝুলিতে অনেক মজার স্মৃতি। কথায় কথায় জানিয়েছেন, অত ছোট বয়স থেকে ধূমপান শুরু। সবটাই
বাবার অজান্তে। ফলে, ঘরে ছাই ফেলার পাত্র যে রাখবেন, সে উপায়ও নেই। কী করতেন তখন? আমার
ঘরের ফুলদানিতে ছাই ফেলতাম। তার পরে নিজের গায়ে, ঘরে ছড়িয়ে দিতাম সুগন্ধি। বাবা যাতে
কিছুতেই টের না পান, বলতে বলতে ধরা গলায় তখন হাসির ছোঁয়া।
এ ভাবেই কলেজ
পেরিয়ে অভিনেত্রী অভিনয়ের দুনিয়ায়। এক দিন একটি শট দেওয়ার পরে সেটে দাঁড়িয়ে সুখটান
দিচ্ছেন। হঠাৎ দেখেন বাইরে বাবা দাঁড়িয়ে। নিজেকে আড়াল করতে সঙ্গে সঙ্গে কলাকুশলীদের
ভিড়ে মিশে গিয়েছেন।
কিন্তু ততক্ষণে
যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ‘রেনবো জেলি’র ‘পরি’ বকুনি এড়াতে কপালে ‘ব’ কাটছেন! কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে দেখেন
বাবা বিছানায় শুয়ে। মেয়েকে দেখেই তাঁর তর্জনগর্জন, এক হাট লোকের মাঝে দাঁড়িয়ে আমার
মেয়ে ফুক ফুক করে ধোঁয়া ছাড়ছেন! দেখে মনে হচ্ছিল মেট্রো রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা
করি। ধূমপানের কারণে বাবার হাতে মারও খেয়েছেন শ্রীলেখা। তবু ধূমপান ছাড়তে পারেননি।
এই নেশা তাঁকে
শ্বশুরমশাইয়ের ঘর থেকেও সিগারেট চুরি করতে বাধ্য করেছিল! অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ফুলশয্যার
রাতে তিনি আর তাঁর স্বামী শিলাদিত্য সান্যাল (এখন প্রাক্তন) এক সঙ্গে বসে ধোঁয়া ছাড়ছেন।
আর সিনেমা দেখছেন। একটার পর একটা সিগারেট পুড়তে পুড়তে বাক্স ফাঁকা! এ বার কী হবে?
নেশা মেটাতে বাধ্য হয়ে পায়ে নুপূর পরে ছম ছম শব্দ তুলে শ্বশুরমশাইয়ের ঘরে চুপিচুপি
মাঝরাতে হানা! ড্রয়ার খুলে সিগারেট চুরি করতে! বলতে বলতে হাসির পরেই ঝাপসা তাঁর গলা!
যে বাবার থেকে নেশা করতে শিখেছিলাম, তিনি শেষের দিকে আমার সিগারেট চুরি করে খেতেন।
ধরা পড়লে বলতেন, এত দামি দামি সিগারেট খাস না। সব ছাড় এ বার! বলতে বলতে মেয়ের প্যাাকেট
থেকেই সিগারেট হাওয়া করে দিচ্ছেন। বাবার শেষ যাত্রায় তাই তাঁর বুক পকেটে দামি সিগারেটের
একটি প্যাকেট দিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলেখা এবং তাঁর ভাইয়ের বৌ।
এই বাবার মুখ মনে করেই কি এ বার ‘ফুক ফুক করে ধোঁয়া ছাড়া’ ছাড়বেন শ্রীলেখা?