নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা
উপজেলার গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরির মজুরি বৃদ্ধি, তৈরি সামগ্রী বিক্রয়ের মূল্য কম, কয়লার
মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টিল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট
ও উৎপাদনের চাহিদা কম থাকায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে উপজেলার কামার শিল্প বিলুপ্তির
পথে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন
ইউনিয়নে হাটবাজারে দেশি প্রযুক্তির দা-কুড়াল, খুনতা ও কাটারি বানাতে বেশ ব্যস্ত সময়
কাটাচ্ছে কামাররা।
উপজেলার বিভিন্ন
ইউনিয়নে বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে এতে কাচি তৈরিতে আগাম ওয়ার্ডার দেয়া শুরু করায় কামার
গ্রাম ও হাট বাজারগুলোতে কাচির টং টং শব্দে এখন মুখরিত। আধুনিকতার উৎকর্ষ বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে
হাজার হাজার গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় এই কামার শিল্পটি।
এক সময় উপজেলার
১০ টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্য সামগ্রী প্রযুক্তির
ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারায় বেশকিছু পরিবার তাদের পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে না পারছে
বাঁচতে, না পারছে বাঁচাতে। কিছুটা বাধ্য হয়েই পরিবারের অভাব অনটন ও চাহিদার তাগিতে
লাভ জনক পেশায় চলে যাচ্ছে। উপজেলার দোহলপাড়া গ্রামের প্রায় ১০ টি পরিবারের কর্মকারেরা
তাদের পৈতৃক পেশা অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে হলেও দু’-মুঠো ভাতের আশায় তারা এ ব্যবসা চালিয়ে
যাচ্ছে। যতটুকু লাভ হোকনা কেন কোনোরকম দিন চললেই তারা খুশি। অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ।
ডিমলা উপজেলার টুনির হাট,ডাঙ্গার হাট,ডিমলা বাজার সহ প্রতিটি হাটবাজারে বোরো ধান কাটা
ও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কামারপাড়ার কারিগররা সারা বছর অলস সময় কাটালেও বর্তমানে বোরো
ধান কাটা ও সামনে কোরবানি ঈদের কারণে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
এখনকার কামাররা
তাদের নিপুণ হাতের তৈরি বঁটি, কুঠার, খুন্তা সহ বিভিন্ন ধরনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত
দ্রব্য তৈরি করেন। উপজেলার দোহলপাড়া গ্রামের মিঠুন চন্দ্র কর্মকার জানান, একটি মাঝারি
ধরনের দা ৪০০ টাকা, তরকারি কাটার কাটারি ৩০ টাকা,কাচি ৪০/৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।
সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যে কয়টা জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে বেশি লাভ না হলেও
পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে এই পেশা ধরে রেখেছি। তিনি আরো
জানান, আমার বাপ দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ঐ সূত্র ধরে আমার জীবনের
শেষ মুহূর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। অন্য কোনো পেশায় যাব সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই। তবে
সরকার আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা ও সুদবিহীন ঋণ প্রদান করলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার
শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে।