দিনাজপুর পার্বতীপুর মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি পৃথিবীর একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি সম্প্রতি আবারও পাথর উত্তোলনে নতুন রেকর্ড গড়ল প্রতিষ্ঠানটি। খনি থেকে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন কাজ রেকর্ড পরিমাণ চলছে।
দিনাজপুর পাবর্তীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান সোমবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের খনির বর্তমান অবস্থান নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, একসময় এই খনিটি সঠিক পরিকল্পনায় ভূগভস্থল থেকে নিয়োমিত লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জার্মান কোম্পানি জিটিসির তত্ত্বাবধানে গত ২০১৮ সালের প্রথম থেকে এই খনিতে কারিগরি প্রযুক্তি বৃদ্ধি করে বিদেশী ও দেশি দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ করে ভূগভস্থল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয়। এভাবে উত্তোলন কাজ পুরাদমে শুরু করা হয়েছিল। পাথরে মজুদ প্রায় আড়াই লক্ষ্য মেট্রিক টন মজুদ হয়েছিল। এখানকার পাথর অগ্রধিকার ভিত্তিতে দেশের বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুতে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু গত ২০২০ সালে সারা বিশ্বের ন্যায় দিনাজপুর জেলাতে করোনার মহামারি দেখা দেয়। ফলে খনিতে কর্মরত বিদেশী দক্ষ বেশ কিছু শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়। তাদের সহযোগী দেশী শ্রমিকেরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে তারা খনি কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। শ্রমিকদের আইসোলিশনে রেখে নিবির চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ফলে প্রায় ২ বছর খনি থেকে আশানরুপ পাথর উত্তোলন করা যায়নি। এখন এ সব করোনা মহামারি কেটে গেছে। আবার পুরাদমে খনি থেকে পাথর উত্তোলন চলছে।
তিনি আরও জানান, সবশেষ গত জুন মাসে রেকর্ড গড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়েছিল এই খনি থেকে। এবার গত জুলাই মাসে রেকর্ডও ভাঙল মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইন কোম্পানি। এ মাসে আহরিত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন পাথর, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ২০ হাজার মেট্রিক টন বেশি। চলতি আগস্ট মাসে পুরাদমে পাথর উত্তোলন চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তথা বিশ্বে ভূ-গর্ভস্থ পাথরের খনি বর্তমানে এটি রয়েছে। দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ায় মাটির ১২৭ থেকে ১৩৬ ফুট গভীরে মূল্যবান গ্রানাইট আবিষ্কৃত হয়েছিল গত ১৯৭৪ সালে। গত ১৯৯৪ সালে শুরু হয় এই খনি থেকে পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু করা হয়। গত ২০১৩ সালে সাময়িক বন্ধ হলেও বর্তমানে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে খনিটি। এতে প্রাপ্ত পাথরের মান আমদানিকৃত পাথরের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পেও ব্যবহৃত হয়েছে খনিটির উল্লেখ্য যোগ্য পাথর।
সুত্রটি জানায়, মধ্যপাড়া যেমন দিনাজপুরকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি গর্বিত করেছে বাংলাদেশকে। সহায়তা পেলে আমরা মধ্যপাড়া খনিকে উপহার দিতে পারি দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে। দেশের উন্নয়নে এই খনির পাথর ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
দিনাজপুর ৫ আসনের সাংসদ সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা পাবর্তীপুর উপজেলায় মধ্য পাড়ায় দেশের সর্ববৃহৎ কঠিন শিলা এবং একই উপজেলার বড়পুকুরিয়ায় কয়লা খনি থেকে কঠিন শিলা ও পাথর উত্তোলন করে দেশের উন্নয়নে মাত্রা সংযোগ হয়েছে। তিনি নিজে গর্বিত তার নির্বাচনী এলাকার ২টি খনি থেকে দেশের উন্নয়নের আগ্রযাত্রায় যোগ হয়েছে। তিনি সব সময় খনি ২টির কয়লা ও পাথর উত্তোলনে খোজ খবর রাখেন।