দক্ষিণ আফ্রিকায়
অতীতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি মোটেও সুখকর নয়। সেখানে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই নিজেদের
নতুন করে চেনালো বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নামলেও প্রোটিয়াদের ৩১৫ রানের বিশাল
লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে সফরকারী দল। সেঞ্চুরিয়নে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ৩১৪ রান।
ঢিমে তালে শুরুর
পর ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন তামিম-লিটন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৫ রানের রেকর্ড
ওপেনিং জুটিও গড়েন তারা। পরে ছন্দ পতন ঘটলেও ইনিংসটা ভালো জায়গায় পৌঁছাতে বড় অবদান
সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলীর শত রান ছাড়ানো জুটির। ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিও ছিল এটি।
পরে মেহেদী মিরাজ-তাসকিন আহমেদের শেষের কার্যকারিতায় ইনিংসটা পেয়েছে অনতিক্রম্য একটা
জায়গা।কারণ সেঞ্চুরিয়নে ৩১৯ রান তাড়া করে জেতার নজির একটিই। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে সেই রান তাড়ায় জিতেছিল প্রোটিয়ারা।
অথচ অতীতে ফিরে
তাকালে বাংলাদেশের জন্য এই কন্ডিশন কখনোই সুখকর ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকায় এতদিন ওপেনিং
জুটিটিও ছিল ৪৬ রানের। ২০০৮ সালে সেটি করেছিলেন তামিম-ইমরুল। কিন্তু এবারের সফরের প্রথম
ওয়ানডেতে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের শুরুটা ছিল সতর্ক ভঙ্গিতে। সময় গড়াতে
গড়াতে হাত খোলা শুরু করেন তারা। বিশেষ করে কেশব মহারাজের ১৯তম ওভারেই পর পর তিন বলে
একটি ছক্কা ও দুটি বাউন্ডারি মেরেছেন লিটন দাস। একটা সময় পঞ্চম ফিফটিও তুলে নেন তিনি।
এর আগে ২২তম ওভারে আন্দিলে ফেলুকাওর বলে এলবিডাব্লিউতে ফেরেন তামিম। শর্ট লেন্থের বল
নিচু হয়ে গিয়েছিল। তামিম পুল করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক
৬৭ বলে ফেরেন ৪১ রানে।
তামিমের ফেরার
পর লিটন দাসও থিতু হতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫০ রানে তাকে বোল্ড করেছেন বামহাতি স্পিনার
কেশব মহারাজ। লিটনের ৬৭ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ১টি ছয়। এই মহারাজই ছন্দ পতন ঘটান
ইনিংসে। আগে-ভাগে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন মুশফিক। ফলাফল অভিজ্ঞ ব্যাটার মিলারের হাতে
তালুবন্দী হয়েছেন ৯ রানে।
এমন সময়েই ইয়াসিরকে
সঙ্গে নিয়ে ইনিংসে ছন্দ ফেরান সাকিব। বামহাতি অলরাউন্ডার মেরে খেলার চেষ্টা করলেও ইয়াসির
ধরে খেলছেন। এই ইনিংস খেলার পথে বেশ কয়েকবার জীবনও পান তিনি। সেই সুযোগে দীর্ঘদিন পর
তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ফিফটিও। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শতরানও ছাড়ায় এই জুটি।
১১৫ রান করা ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি ভাঙে সাকিবের বিদায়ে। লুঙ্গি এনগিদির বলে লেগ বিফোরের
ফাঁদে পড়লে ৭৭ রানে শেষ হয়েছে তার ইনিংস। যার ৬৪ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৩টি ছয়।
ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পাওয়া ইয়াসিরও ফিরেছেন তার পর। রাবাদাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে
৪৪ বলে তিনি ফেরেন ৫০ রানে।
পরিপক্ক জুটি
ভাঙায় স্বাভাবিকভাবেই রান তোলার বাড়তি দায়িত্বটা ছিল আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহর। রান
তোলার এই তাড়াতে বিপদ ডেকে আনেন আফিফ। মার্কো ইয়ানসেনের বলে ১৭ রানে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন
স্কয়ার লেগে। মাহমুদউল্লাহ এসময় ছক্কা হাঁকিয়ে শেষটা আরও সমৃদ্ধ করার ইঙ্গিত দিলেও
তাকে থামিয়ে দিয়েছেন ইয়ানসেন। তাতে ১৭ বলে ২৫ রানেই ফিরেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবে শেষ
দিকে স্কোর তিনশো ছাড়ায় মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের কার্যকরী ব্যাটিংয়ের কল্যাণে।
বিশেষ করে মেহেদী দুটি ছক্কা মারাতেই ৭ উইকেটে স্কোর দাঁড়ায় ৩১৪।
প্রোটিয়াদের
হয়ে ৫৬ রানে দুটি উইকেট নেন কেশব মহারাজ। ৫৭ রানে দুটি নেন মার্কো ইয়ানসেনও। একটি করে
নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিদি, কাগিসো রাবাদা ও আন্দিলে ফেলুকাও।