ঢাকার দোহার উপজেলায় অস্ত্র ও মামলামালসহ সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে দোহার থানা পুলিশ। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে দোহার সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন; আল আমিন (২৫), মো. আলী (৫৫), রাকিব (২৩) ও জাফর আলী (৩৬)।
আল আমিন দোহার উপজেলার পশ্চিম নুরপুর লেংড়ার ব্রিজ সংলগ্ন আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে, মো. আলী ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার নরকোনা এলাকার মৃত বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে, রাকিব মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার লক্ষীপুর এলাকার আব্দুল গাফফারের ছেলে এবং জাফর আলী ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার গন্দরবপুর এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর দোহার উপজেলার রাধানগর দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা মৃত তাজেল মোল্লার ছেলে মো. ছন্দু মোল্লা তার স্ত্রী করিমন বিবি, ছেলে রেজাউল করিম রাজন, ছেলের স্ত্রী বীনা আক্তার ও নাতি বেলায়েতকে নিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই দিন রাত আনুমানিক পৌনে ৩ টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্রসহ মো. ছন্দু মোল্লার বসতঘরের কাঠের দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে এবং একজন ডাকাত তার হাতে থাকা ধাঁরালো চাপাতি দিয়ে মো. ছন্দু মোল্লার ছেলে রেজাউল করিম রাজনের বাম হাতে কোপ দিয়ে জখম করে।
এরপর ডাকাতরা রেজাউল করিম রাজনের দু’হাত গামছা দিয়ে পিছন দিকে বেধে পরিববারের লোকজনকে খুন করার ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাঁচ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন যার মূল্য প্রায় ৩৩ হাজার টাকা, সাড়ে তিন আনা ওজনের একজোড়া স্বর্ণের দুল যার মূল্য প্রায় ২১ হাজার টাকা, সাড়ে পাঁচ আনা ওজনের কানের একজোড়া স্বর্ণের দুল যার মূল্য প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল সেট যার বাজার মূল্য ৬৯ হাজার টাকা, ২টি কালো রংয়ের স্টীলের টর্চ লাইট যার মূল্য আনুমানিক ৬ হাজার টাকা। সর্বমোট ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মো. ছন্দু মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ডাকাতের বিরুদ্ধে দোহার থানায় একটি মামলা দায়ের।
এ ঘটনায় দোহার থানায় মামলা রুজু হলে দোহার থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত ৮ জন স্থানীয় ডাকাতকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামিরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. আলী তাদের সবার কাছে মুরুব্বি বা সর্দার হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ডাকাতদের সাথে কথা বলে কাজ নেন ও একেক সময় একেক দলকে কাজে লাগান। এ ছাড়া তারা জেলখানায় বিভিন্ন ডাকাতদের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন বলে জানা যায়।
থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা সকলেই পেশাদার ডাকাত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি-ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। উক্ত দলের সদস্যগণ বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করত ও টার্গেট ঠিক করত, পরে একত্রে ডাকাতি করে বেরিয়ে যেত। এসব অপরাধের জন্য তারা স্থানীয় ডাকাতদের সহযোগিতা নিত বলে জানা গেছে।