শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়া শেরপুর পৌরসভার সাড়ে ৮ কোটি টাকার দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী সময় পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি অধিকাংশ কাজ। প্রথম দফায় কাজের সময় বৃদ্ধি করার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর না হলে প্রকল্পই বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। এত দিনে জানা গেল, উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ার কারণেই এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় চলমান কাজের খোঁজ নিতে গেলে বেরিয়ে আসে এই তথ্য।
অফিস সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার প্যাকেজে ৫টি পাবলিক টয়লেট, ১০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন, ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, কাজ শুরু করলেও
একটি স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা), একটি সলিড ওয়েস্ট কম্পোস্টিং সিস্টেম, ১৯টি কমিউনাল বিন ও একটি সলিড ওয়েস্ট সর্টিং শেড তৈরি করার কথা। জায়গার অভাবে এখনো কাজ শুরু করতে পারে নাই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান
গত জুনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে প্রথম দফায় বৃদ্ধি করা তিন মাসের মেয়াদও শেষ হয়। শুধু ড্রেনের ৭০ শতাংশ, ১৫টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় ড্রেন ও কমিউনিটি ল্যাট্রিন ছাড়া বাকি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিএল অ্যান্ড এমআর জয়েন্ট ভেঞ্চার ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছে।
দরপত্র অনুযায়ী, একটি স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, একটি সলিড ওয়েস্ট কম্পোস্টিং সিস্টেম ও একটি সলিড ওয়েস্ট সর্টিং শেড তৈরি করার কথা। এর জন্য প্রকল্পের প্রাক্কলনের সময় পৌরসভা-সংলগ্ন করতোয়া নদীর পাশে দুই একর জায়গা দেখানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে টেন্ডার আহ্বান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা জানান, জায়গাটি গভীর হওয়ায় সেখানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া এলাকাটি আবাসিক হওয়ায় পরিবেশ বিভাগের অনুমতিও পাওয়া যায়নি। বিকল্প হিসেবে পৌর শহরের বাইরে হাওয়াখানা এলাকায় আরেকটি জায়গার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেটিও উপযুক্ত না হওয়ার কাজ করতে রাজি না জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। তবে সময় সাপেক্ষে গাড়িদহ ইউনিয়নের রণবীর বালা এলাকায় ১৭ একর জায়গা কেনার কথা ভাবছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
শেরপুর পৌরসভার নির্বাহ প্রকৌশলী (সিভিল) এস এম শফিকুল ইসলাম (শামীম) আজকের দর্পণ পত্রিকাকে বলেন, এ মুহূর্তে নতুন করে জায়গা কেনার মতো আমাদের টাকা নেই। তাই হাওয়াখানা এলাকার জায়গা বিক্রি করে রণবীর বালা এলাকায় একটি জায়গা কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সেটা সময়সাপেক্ষ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিএল অ্যান্ড এম আর জয়েন্ট ভেঞ্চারের তত্ত্বাবধায়ক হাজি সেলিম রেজা বলেন, পৌরসভার দেখিয়ে দেওয়া জায়গাগুলো বিভিন্নভাবে দখল হয়ে আছে। সেগুলো মুক্ত করার জন্য তাঁরা কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না।
দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়ে পৌরসভার সচেতন নাগরিকরা ‘প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও নাগরিকেরা সব আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পৌর কর্তৃপক্ষের এই ধরনের উদাসীনতা আমাদের হতাশ করেছে।
এ বিষয়ে শেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর রিপা পারভিন বলেন ড্রেনের ৭০ শতাংশ, ১০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন তৈরির ৩৫ শতাংশ, কাজ শেষ হয়েছে। একটি স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা), একটি সলিড ওয়েস্ট কম্পোস্টিং সিস্টেম, ১৯টি কমিউনাল বিন ও একটি সলিড ওয়েস্ট সর্টিং শেড তৈরি করার কথা থাকলেও জায়গা না পাওয়াই কাজ শুরু করা যায় নাই।
এ বিষয়ে বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দরপত্র আহ্বানের আগে আমরা জরিপ করেছিলাম। তখন পৌরসভা আমাদেরকে কিছু জায়গা দেখিয়েছিল। তার ভিত্তিতেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এখন তাঁরা উপযুক্ত জায়গা দিতে না পারলে আমাদের করার কিছু থাকবে না।