জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের মামলায় অবশেষে কারাগারেই যেতে হলো চাঁদপুরের আলোচিত 'বালুখেকো' চেয়ারম্যান সেলিম খানকে। বুধবার বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম বিষয়টি জানিয়েছেন।
সেলিম খানের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা
দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার ঢাকা টাইমসকে সেলিম খানকে কারাগারে পাঠাতে
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সেলিম খানকে কারাগারে
পাঠাতে আমরা আবেদন করেছিলাম। অন্যদিকে তার আইনজীবীরা সেলিম খানের জামিনের আবেদন করেন।
আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে সেলিম খানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
গত ১ আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি
টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক।
কমিশনের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বাদী
হয়ে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগেরদিন সেলিম
খানের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছিল দুদক।
সেলিম খানের অবৈধ সম্পদের তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানকারী
কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমানের দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেলিম
খানের নিজ মালিকানায় চাঁদপুরের সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মৌজায় ১৯
দশমিক আট নয় একর জমি, ঢাকার কাকরাইলে আজমিন ভবন নামে পাঁচতলার একটি বাড়ি, কাকরাইলে
৭১৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূইঘর মৌজায় শূন্য দশমিক ১২৫০ একর
জমিতে দশ তলা বাড়িসহ প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোট ২৬ কোটি ৪২ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের
স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে।
এছাড়া ছয়টি ড্রেজার মেশিন, তিনটি প্রাইভেট
কার ও জিপ, একটি পিস্তল, একটি শর্টগান, আসবাবপত্র ও সোনার গহনা, ব্যাংকে ও হাতে নগদ
টাকা, ৯টি সিনেমা নির্মান ও আমদানি বিনিয়োগসহ ১১কোটি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের
অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৩৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা মূল্যের
সম্পদের রেকর্ড পাওয়া যায়।
অন্যদিকে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়
পাওয়া যায় ১ কোটি ছয় লাখ ৩৮ হাজার ৩১০ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ স্থাবর-অস্থাবর
সম্পদ অর্জনে তার মোট ব্যয় ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী
তার গ্রহণযোগ্য আয় চার কোটি ১৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে আয় অপেক্ষা তার অতিরিক্ত
সম্পদের পরিমাণ ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকা। যা অনুসন্ধানকালে তার আয় বহির্ভূত
বা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ বলে মনে হয়েছে।
অভিযোগ আছে, চাঁদপুরের নদী থেকে বছরের
পর বছর অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে প্রকৃতি-পরিবেশ বিনষ্টসহ বিপুল অংকের সরকারের রাজস্ব
ফাঁকি দিয়ে নিজে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানের দেখা গেছে, অবৈধভাবে
বালু উত্তোলনের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এই টাকা বৈধ করার জন্য সেলিম খান কয়েকমাস আগে
জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে মাত্র ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব দিতে চেয়েছিলেন। সেলিম খান চেষ্টা
করলেও জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তার সেই টাকা নেয়নি।
ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, সেলিম খান এক
যুগেরও বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। যখন বিষয়টি গণমাধ্যমসহ উচ্চ
আদালতের নজরে আসে তখনই তিনি তড়িঘড়ি করে ১৩ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা
করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।