দ্বিতীয় টেস্টে ৩০০ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ দুবার ব্যাটিংয়ে নেমেও তাদের ধারেকাছে যেত পারলো না কোনও ভাবে! বরং ধৈর্য পরীক্ষার খেলায় হার মেনেছে ইনিংস ও ৮ রানের ব্যবধানে।
অথচ প্রায় দুটি দিন বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। সেখান থেকে ব্যাট করতে নেমেও শেষ দিন ৮৭ রানে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের। ফলোঅনে পড়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও স্বস্তি দিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটিং। বরং তাড়াহুড়োর খেসারতই দিয়েছে দিন শেষে। তাতে দুই টেস্টেই হার দেখেছে বাংলাদেশ।
২১৩ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামার পর টপের ৪ উইকেট হারিয়েই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তার পরেও টেস্ট বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন লিটন-মুশফিক। তাদের দৃঢ় চেতা ব্যাটিং ভালো কিছুর সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলছিল। দ্বিতীয় সেশনে ৭৩ রানের দারুণ এই জুটি ভাঙে লিটন দাসের কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে। সাজিদের ঘূর্ণিতে শট খেলার তাড়নায় স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন ৪৫ রানে। তার ৮১ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার।
দারুণ এই জুটি ভাঙার পর মুশফিক সাকিবকে নিয়েও পুনরায় প্রতিরোধ গড়েছিলেন। মুশফিক ধীরস্থির ভাবে খেললেও সাকিব ছিলেন মারকুটে। দুজনের ৪৯ রানের জুটিটা আশা জাগানিয়াও হয়ে উঠেছিল। চা বিরতির আগে দারুণ এই জুটি ভাঙে সাকিব-মুশফিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয় রান নিতে গেলে। ডাইভ দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি মুশফিক। যখন রিজওয়ান স্টাম্প ভাঙেন, স্ট্রাইকিং প্রান্তে তখনও ব্যাট বাতাসে ভাসানো ছিল তার। তাতে ১৩৬ বল খেলা মুশফিককে থেমে যেতে হয় ৪৮ রানেই!
ড্র এনে দিতে শেষ সেশনে টিকে থাকাই যথেষ্ট ছিল। যার প্রত্যয় দেখা যাচ্ছিল সাকিব-মিরাজের ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ৫১ রান করা এই জুটি ভেঙে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। টেস্টে যিনি আগে আগে কখনও বল করেননি। সেই বাবর আজম প্রথমবার বল হাতে নিয়েই পেয়েছেন সাফল্য। তার বলে এলবিডাব্লিউর আবেদন উঠলে আম্পায়ার আঙুল তুলেছিলেন। পরে রিভিউ নিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। ৭০ বল খেলে ১৪ রান করা এই ব্যাটারকে ফিরতে হয় সাজঘরে। তার বিদায়ের পর সাকিবও মনোযোগ হারিয়ে বসেন যেন। সাজিদের অসাধারণ এক স্পিনে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন এই অলরাউন্ডার। ১৩০ বলে ৬৩ রান করেন তিনি। তাদের বিদায়ের পর ইনিংস হারটা সম্ভাব্যই হয়ে উঠে। খালেদ আহমেদের পর তাইজুল কিছুক্ষণ ক্রিজে থাকলেও ইনিংস হার এড়াতে পারেননি। তাইজুল লেগ বিফোরে ফিরলে ২০৫ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস।
মিরপুরে শেষ দিন সকালের শুরুতেই প্রথম ইনিংস শেষ হয় বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফলোঅন এড়াতে পারেনি। ফলোঅন এড়াতে ১০১ রান করলেই হতো। কিন্তু দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের শেষ দিনের সকালটা শুরু হয় লক্ষ্যহীন ব্যাটিংয়ে। তাইজুল, খালেদের পর সাজঘরে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও! প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে থাকার বিন্দুমাত্র দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি সাকিব।
সকালে শাহীনের প্রথম ওভারের পর দ্বিতীয় ওভারে আসেন সাজিদ খান। গতকাল যার স্পিন বিষে নীল হওয়া, সেই স্পিনারই সাজঘরে পাঠালেন তাইজুলকে। সাজিদের ঘূর্ণিতে লেগবিফোরের আবেদন উঠলে অনফিল্ড আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। পরে রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।
পরের ওভারে নতুন নামা খালেদ আহমেদও ফিরেছেন রানের খাতা না খুলে। শাহীনের ইয়র্কার লেন্থের বলে বোল্ড হন এই পেসার। সাকিব অপরপ্রান্তে থাকলেও মেরে খেলায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। শট খেলতে গিয়েই শর্ট কভারে ক্যাচ তুলে দেন। ফলাফল সাকিব ৫৪ বলে ৩৩ রানে ফিরতেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এখন ২১৩ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে ব্যাট করছে স্বাগতিকরা।
বৃষ্টিতে প্রায় দুদিন ভেসে যাওয়ার পর গতকালই জমে উঠে ঢাকা টেস্ট। বাংলাদেশের বাজে ব্যাটিংই কাল হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তান ৩০০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর শেষ বিকালে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ব্যাটিং অর্ডার। চতুর্থ দিন ৭৬ রান তুলতেই স্বাগতিকরা হারায় ৭ উইকেট।
ঘূর্ণিজাদুতে দুদিনে সাজিদ খান ৪২ রানে নিয়েছেন ৮ উইকেট! যা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কারও সেরা বোলিং। একটি নেন শাহীন আফ্রিদি।