হাবিবুর রহমান, ঈশ্বরদী (পাবনা):
পাবনার ঈশ্বরদীতে পুলিশ পরিচয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ এবং ওয়াকিটকি নিয়ে ২০০ বোতল ফেন্সিডিল ছিনতাইয়ের ঘটনা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, এ ঘটনায় মামলা না করার শর্তে নগদ পঞ্চাশ (৫০) হাজার টাকা লেনদেনের ও তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। উল্লেখ্য গত (১৬ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার ভোর রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার এয়ারপোর্ট মোড় এলাকায় এই ঘটেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাঘা থেকে আসা
একটি টিভিএস মোটরসাইকেল আরোহীকে ঈশ্বরদী এয়ারপোর্ট মোড়ে গতিরোধ করে দাঁড়ান কয়েকজন যুবক।
সে সময় তাদের হাতে থাকা হ্যান্ডকাপ এবং ওয়াকিটকি নিয়ে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেলে
থাকা দুটি ব্যাগ তল্লাশী করতে চান তারা। তল্লাশীকালে ব্যাগ দুটি থেকে ২’শ বোতল ফেন্সিডিল
উদ্ধার করেন তারা। এসময় অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের অপরাধে মো. আশিক নামে একজন ফেন্সিডিল
বহনকারীদের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেন এবং এয়ারপোর্ট মোড়ের অদুরে পরিত্যাক্ত একটি জুতার
কারখানায় নিয়ে নানা প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নগদ পঞ্চাশ (৫০) হাজার টাকা এবং জব্দকৃত
২০০ বোতল ফেন্সিডিলের কথা গোপন রাখার শর্তে ছেড়ে দেন আটককারীদের।
অনুসন্ধানের সূত্রে, ১৮ সেপ্টেম্বর আড়াম
বাড়ীয়া বাজারে গিয়ে দেখা মিলে এক সময়ের বিখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত
থাকা ন্যাংড়া বিপুর । তিনি ২’শ বোতল ফেন্সিডিল আটকের ঘটনা অকপটে
অস্বীকার করে গেলেও ঘটনার কিছু সূত্র দিয়ে যান নিজের অজান্তেই। ল্যাংড়া বিপুর দেখানো
পথেই সন্ধান মেলে মাদক বহনকারী দুই মাদক ব্যবসায়ীর। ফেন্সিডিল বহনকারী ব্যাক্তিরা হলেন,
রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন কলি গ্রামের মো. শাহেব আলী (২৭) এবং মো. শিমুল (২৭)। সেখানে
গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে।
তারা বলেন, ঘটনার দিন সাহেব আলীর নিজেস্ব
টিভিএস মোটরসাইকেল যোগে দুটি ব্যাগ ভর্তি ২’শ পিচ ফেন্সিডিল
নিয়ে ঈশ্বরদীতে আসতেছিল তারা। পথিমধ্যে তাদের মোটরসাইকেলটি ঈশ্বরদী এয়ারপোর্ট মোড় এলাকায়
আসলে গাড়ীর গতিরোধ করতে পথ আটকে দাঁড়ান কয়েকজন। সে সময় তাদের হাতে থাকা হ্যান্ডকাপ
এবং ওয়াকিটকি দেখে আমরা ভয় পেয়ে যায়। তারা আমাদের গাড়ীতে থাকা ব্যাগ তল্লাশী করে ফেন্সিডিল
পাওয়ার পর আমাদের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেন এবং রাস্তা থেকে আমাদের এয়ারপোর্ট মোড়ের
অদুরে একটি পরিত্যাক্ত ভবনে নিয়ে যান। সেখানে আমাদের নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।
সে সময় তাদের কথোপকথনে আমরা জানতে পারি তাদের মধ্যে একজনের নাম ন্যাংড়া বিপু আরেক জনের
নাম আশিক তবে অন্যান্য ৩/৪ জনের নাম জানতে পারি নাই।
পুলিশের সোর্স দাবি করা এবং প্রশাসনের ব্যবহৃত হ্যান্ডকাপ ও ওয়াকিটকি বহনকারী মো. আশিক ঈশ্বরদী উপজেলার আরামবাড়িয়া এলাকার মো. মহাসিনের পুত্র। ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার এএস আই মো. সাফিরুল বলেন, ঘটনায় উল্লেখিত দিন আমি সিরাজগঞ্জে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। ফিরেছি শুক্রবার সন্ধার পর সুতরাং এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
সোর্স আশিক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি
বলেন, আশিক নামে আমি কাউকেই চিনি না সুতরাং এ নামে আমার কোন সোর্সও নেই। এ ব্যাপারে
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই
জানি না। আপনি জানাচ্ছেন এর জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টি আমি দেখছি।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন যাবৎ পুলিশ পরিচয়ে
এবং প্রশাসনের ব্যবহৃত হ্যান্ডকাপ ব্যাবহার করে ঈশ্বরদীতে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্তও এসকল ঘটনার সুরাহা করতে পারেনি। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন
সচেতন মহল ও সাধারন জনমনে একটি প্রশ্নই উঠেছে, প্রশাসনের ওয়াকিটকি এবং হ্যান্ডকাপ ব্যাবহার
করে ছিনতাইকারী ওরা কারা ?