বাংলাদেশ সমবায়
ব্যাংকের ঋণের মামলায় ঈশ্বরদীর ১২ জন প্রান্তিক কৃষককে জেলে পাঠানো হয়েছে। মাত্র ২৫-৩০
হাজার ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে ব্যাংকের দায়েরকৃত মামলায় পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল
আদালত ৩৭ জন কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এবং
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুপুরের
পর আটককৃত প্রান্তিক কৃষকদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানা
পুলিশ কৃষক গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামীয় একটি
আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে প্রান্তিক কৃষরা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা পরিশোধের পরও তাঁদের
বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পাবনা জেলা শহরের এলএমবি মার্কেটে বাংলাদেশ
সমবায় ব্যাংকের জেলা কার্যালয়। শুক্রবার ওই কার্যালয় বন্ধ ছিল।
গ্রেপ্তারকৃত
১২ কৃষকের মধ্যে রয়েছেন, ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের মনি মন্ডলের ছেলে
মাহাতাব মন্ডল (৪৫), মৃত সোবহান মন্ডলের ছেলে আবদুল গণি মন্ডল (৫০), কামাল প্রামাণিকের
ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামাণিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের
ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬), শুকুর প্রামাণিকের ছেলে
আলম প্রামাণিক (৫০), লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব
আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু
(৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০)। গ্রেপ্তারকৃতরা সকলেই প্রান্তিক
কৃষক বলে জানা গেছে।
মামলার বিবরণে
জানা যায়, ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষক বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক হতে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে ঋণ
নিয়েছিলেন। ঋণের অর্থ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
দায়ের হয়। আদালত এসব প্রান্তিক কৃষকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই
প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী থানা–পুলিশ অভিযান
চালিয়ে ১২ জন প্রান্তিক কৃষককে গ্রেপ্তার করে।
ঈশ্বরদী থানার
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার শুক্রবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘২০২১ সালে ওই
৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালত গত বুধবার এদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
করেন। এরই ভিত্তিতে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে চালান দেওয়া হয়েছে।’ ওসি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কৃষকেরা
দাবি করে বলেন, ঋণের টাকা তাঁরা পরিশোধ করেছেন। এরপরও কেন মামলা হলো, সে বিষয়ে তাঁরা
কিছুই জানেন না।
বাংলাদেশ কৃষক
সমিতির পাবনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,
‘হাজার হাজার কোটি
টাকা ঋণ নিয়ে অনেকেই টাকা পরিশোধ না করে দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ প্রান্তিক
কৃষকের মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণের জন্য জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে। অবিলম্বে এসব প্রান্তিক
কৃষকদের শর্ত ছাড়া মুক্তির দাবি জানান তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা
কৃষকলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান মালিথা কৃষক গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি
বলেন, ‘কৃষক বান্ধব শেখ
হাসিনা সরকারের আমলে প্রান্তিক কৃষকদের সামান্য ঋণের কারণে গ্রেপ্তার সত্যিই খুবই দুঃখজনক।’
বাংলাদেশ কৃষক
উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যে মামলায় কৃষকদের
গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ঋণের টাকা আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। এর রশীদও কৃষকদের কাছে
আছে বলে জানান তিনি। তবু কেন মামলা ও গ্রেপ্তার করা হলো তা বোধগম্য নয়।’