শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একঝাঁক পানকৌড়িসহ বিভিন্ন পাখির মিলনমেলায় এক অপরুপ দৃশ্যের অবতারণা সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পাখিরা বেছে নিয়েছে সাফারি পার্কের কুমির বোস্টনির পাশের গাছগুলো। নিস্তব্ধতা ভেঙে চারপাশ পাখির কোলাহলে মুখরিত পার্ক।
পানকৌড়ি আর বক পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ভোর হওয়ার সাথে সাথে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে ওখানকার পার্ক কর্তৃপক্ষ ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের। বাশঁঝাড় কিংবা উচুঁ গাছের দিকে তাকালে দেখা যাবে শত শত পানকৌড়ি আর বকের নিরাপদ প্রজনন আবাসস্থল। এখানেই জন্ম নিচ্ছে পাখির বাচ্চা। প্রজননের জন্য আসা এসব পাখিদের ভালোবাসে পার্ক কর্তৃপক্ষ খাবারের সু ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পাখিদের আবাসস্থল পার্কের ভেতরে হওয়ায় প্রতিদিনই পাখিদের দেখার জন্য ছুটে আসেন সাধারণ মানুষ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, এখানে গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় পাখির সাদা কালো ফুল ফুটে আছে। পাখিদের মিলন মেলা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক । পানকৌড়ি ও বক এর প্রজনন দেখতে যেতে হবে সাফারি পার্কে সকালে অথবা সন্ধায়। প্রকৃতি প্রেমিক-পাখি প্রেমী মানুষগুলো এখানে ভীড় জমায়। এ কারণে পাখিদের অভয়ারণ্য এ পার্ক। বয়স্ক ভারী গলার কাশির শব্দের মতো খকখক, খেকর খেকর ডাক শুনা যায় । এখানকার গাছগুলোতে রয়েছে অতি চেনা ছোট পানকৌড়িদের বেশ বড় একটি আবাসস্থল বা কলোনি।
ছোট পানকৌড়িরা এখানে আসে জ্যৈষ্ঠ মাসে। তারা জোড় বাঁধে, বাসা বানায়, ডিম দেয়, বাচ্চা ফোটায়। আবার বাচ্চা বড় করে আশ্বিনের প্রথম দিকে তারা উড়ে যায় তুলনামূলক আরও ভালো কোনো আশ্রয়ের উদ্দেশে। তবে ফাঁকা থাকে না গাছগুলো। ওরা চলে যেতেই অগ্রহায়ণে আসে সাদা বকের দল, শালিক আর চড়ুই। বকের দল বাচ্চা তুলে ফিরে যায় বৈশাখের শেষে। তবে এখানে বকদের অবস্থান পানকৌড়িদের মতো সরব নয়। কারণ বাচ্চাদের খাবার দিতে পানকৌড়িদের মতো তারা ছোট দূরত্ব থেকে বারবার মাছ নিয়ে বাসায় ফেরে না। খাবারের জন্য তারা অনেকটা দূরের পথে উড়ে যায়। দু-একবার ফেরে দলছুট হয়ে। সন্ধ্যায় ফিরে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে, বড় বড় দলে।
ছোট পানকৌড়ি আমাদের দেশের একটি স্থায়ী পাখি। মাছ ওদের একমাত্র খাদ্য। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এরা অতিপরিচিত। কালো শরীরে ছড়ানো লেজ, কালো হাঁসের মতো পা। সাপের মতো লম্বা বাঁকানো গ্রীবা, সুচালো বাঁকা ঠোঁট। প্রজননকালে শরীরের কালো রং কিছুটা ফিকে হয়। সচরাচর দেখা যায় নদী ও বিল এলাকায়। উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ছোট পানকৌড়ি দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ছেলেমেয়ে উভয় পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। বাচ্চা ফুটতে লাগে ১৭ থেকে ২১ দিন। দেশের নদী অঞ্চলের মাছের ঘেরে এদের বিচরণ নিয়মিত। ডুব দিয়ে সাঁতারে মাছ ধরতে এই ছোট পানকৌড়ি অনেক সময় দুঃসাহস দেখিয়ে বাড়ির পুকুরেও নেমে পড়ে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ২৫-৩০টি গাছকে ঘিরে এই পানকৌড়ি কলোনি গড়ে ওঠেছে । এরা পার্কে নিরিবিলি পরিবেশ পেয়ে খুবই নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলেছে । ঝড়-বৃষ্টির সময় বাতাসে গাছ থেকে বাচ্চা পড়ে যায়। আবার ছোট বাচ্চারা বাসা ছেড়ে বের হতে গিয়ে মাটিতে পড়ে কুকুর-বিড়ালের খাদ্য হয়। আছে শিকারী পাখির উপদ্রব।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। দেশের নানা বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণির জায়গা হয়েছে এ পার্কে। এর পাশাপাশি পার্কটি বনাঞ্চল ঘেরা হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছে পাখির নিরাপদ অভয়্যরণ্য। পাখিদের নিরাপদ পরিবেশ, প্রাকৃতিকভাবে আহারের ব্যবস্থা ও প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করায় পাখিরা এখানে আসছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, পার্কের বাহিরে পাখিরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। সেখানে পাখি শিকারীসহ নানা পেশার মানুষ পাখিদের বিরক্ত করে। পাখিদের জীবন ও জীবিকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ায় পাখিরা এখানে আবাসস্থল তৈরি করেছে। এখানে পাখিদের কেউ বিরক্ত করছে না। আহারের ব্যাবস্থার জন্য পার্কের লেকে মাছ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পার্কে নানান জাতের রং-বেরঙের পাখির মেলা বসেছে। প্রতিদিন সকালে খাবারের উদ্দেশ্য তারা দূর-দূরান্তে চলে যায়। বিকেলে নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পার্কে ফিরে আসে। সন্ধায় পাখির কলকাকলিতে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। পানকৌড়ি ছাড়াও পার্কে আবাবিল,ধলা গলা মুনিয়া বিভিন জাতের ঘুঘু, মাছরাঙা, হরিয়াল ও নীলকন্ঠি পাখি দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, সাফারি পার্কে পাখি কলোনি তৈরি হয়েছে। যাএকঝাঁক পানকৌড়ির অভয়াশ্রম হিসেবে উপযোগী একটি স্থান।