
বিশ্বব্যাপী শিল্প ধাতু ইস্পাতের উৎপাদন কমেছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এপ্রিলে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ২৭ লাখ টন। একই সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এপ্রিলে চীনের উৎপাদিত ইস্পাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কোটি ২৮ লাখ টন। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ চিত্র দেখা যায়।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন কমে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। উল্লিখিত সময়ে শিল্প ধাতুটির মোট বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়ায় ৬১ কোটি ৯১ লাখ টন। গত মাসে শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী ১০টি দেশের সাতটি দেশই নেতিবাচক চিত্র দেখেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভারত, রাশিয়া ও তুরস্ক। এপ্রিলে ভারতে ইস্পাত উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। এ সময়ে তুরস্কের ইস্পাত উৎপাদন বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ ও রাশিয়ার দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে অন্য শীর্ষ দেশ ইরান শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক চিত্র দেখেছে। গত মাসে দেশটির ইস্পাত উৎপাদন কমে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ।
চীনে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে ইস্পাতের চাহিদা ও দামে বেশ নেতিবাচক দৃশ্য দেখছে দেশটি। বছরের প্রথম চার মাসে চীনের ইস্পাত উৎপাদন কমেছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৬২ লাখ টন। দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ভারতে শিল্প ধাতুটির অবস্থান বেশ ইতিবাচক দেখা গিয়েছে। বছরের প্রথম চার মাসে দেশটির ইস্পাত উৎপাদনের হার বেড়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৪ কোটি ২৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করে ভারত। সম্প্রতি ইস্পাতের ওপর রফতানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত, যা দেশটির ইস্পাত উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এপ্রিলে তৃতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ জাপানের উৎপাদনের হার কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময়ে দেশটির মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৫ লাখ টন। বছরের প্রথম চার মাসে জাপানের ইস্পাত উৎপাদন কমেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। উল্লিখিত সময়ে দেশটির মোট উৎপাদিত ইস্পাতের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫ লাখ টন। এ সময়ে চতুর্থ শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন হার কমে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এপ্রিলে দেশটির মোট উৎপাদিত ইস্পাতের পরিমাণ ৬৯ লাখ টন। বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট উৎপাদিত ইস্পাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৭১ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ কম। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা ও ইস্পাত শিল্পের আধুনিকায়নের উদ্যোগের ফলে দেশটিতে ইস্পাতের দাম কমে আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পঞ্চম বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া এপ্রিলে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে ক্ষুদ্র প্রবৃদ্ধি দেখেছে। এ সময়ে দেশটির উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ লাখ টন। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রাশিয়ার ইস্পাত উৎপাদন কমে দশমিক ৭ শতাংশ। ইউক্রেনে দেশটির সামরিক অভিযানের ফলে শিল্প খাতে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় এ শ্লথগতি দেখছে দেশটি। এ সময়ে অভ্যন্তরীণ ইস্পাতের ব্যবহারের পরিমাণও কমিয়ে এনেছে রাশিয়া। এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৫৫ লাখ টন। এ সময়ে সপ্তম বৃহত্তম উৎপাদনকারী জার্মানির ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৩ লাখ টন। একই সময়ে তুরস্কের ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ লাখ টন, ব্রাজিলের ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২৯ লাখ টন ও ইরানে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ লাখ টন।