গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে। সে সুবাদে ভোটে অনিয়ম করে কেউ জয়ী হয়ে হলে এবং সেই নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরও তা বাতিলের ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়ম হলেও ফলাফলের গেজেট হওয়ার পর আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। কমিশনের এই ক্ষমতা পাওয়ার জন্যই সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। এটা হলে ভোটের ফল ঘোষণার পরও তা বন্ধ করার ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকবে। কিন্তু ওনারা বললেন যে, ৯১ দিয়েই কাভার হচ্ছে। তবে আমরা যতটুকু জানি ৯১ দিয়ে আসলে কাভার হয় না। ওনাদের কাছে আমরা সেই যুক্তিটা তুলে ধরেছি।’
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আমি কমিশনে যোগ দেওয়ার পর একটি ফাইল এলো। ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে হয়ত ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু মাননীয় হাইকোর্ট বললেন, গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। আমরা এজন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে; প্রস্তাব করেছিলাম। উনারা জানতে চাইলে আমরা এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।
গেজেট হওয়ার পরে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে, তার আগে তো পারা যাবে না। যখন একজন হারবেন, তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, উনার অধিকার। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইলেন। কিন্তু সেটি তো উদ্ধার হয়নি। কখন কার কাছে চলে গেছে। তো যেটা উদ্ধার হয়নি, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে? এক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এই রকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত যাতে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ, যিনি ডিপ্রাইভড হলেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এই কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি।
আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা নির্বাচন কমিশনের জাস্টিফিকেশনে খুশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বলেছেন, আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাস হবে সংসদে। এটাই ওনারা পাঠাবেন। ভেটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না।’
দুই-একটি জায়গায় আরও চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘তার মধ্যে একটি হলো- ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারণ করে দিতে চাচ্ছিলাম। এটা আইনে চলে আসুক যে এক শতাংশের বেশি অ্যালাউ করব না। ওনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব। এই একটা পয়েন্টে ওনারা আপত্তি করেছিলেন।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে আমরা বলেই দেব যে কত শতাংশ ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙ্গুল নেই তাকে তো ভোট দেয়ার সুযোগটা দিতে হবে।
‘তবে আমরা এমন কিছু দেবো না, ১ শতাংশ একটি জাস্টিফাইড সংখ্যা। প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। অতীতে ৫ শতাংশও দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ করেন অনেকে। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর এ নিয়ে কথা বলতে পারবে না। তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিলেই হবে।’