আজঃ মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম

ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থিদের জয়, হচ্ছে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

প্রকাশিত:সোমবার ০৮ জুলাই ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৮ জুলাই ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে বামপন্থি জোট নিউ ফ্রন্ট পপুলার (এনএফপি) সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে উগ্র ডানপন্থিরা এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় দফায় তারা তা ধরে রাখতে পারেনি। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বামপন্থি এনএফপি এগিয়ে রয়েছে।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে বামপন্থি এনএফপি জোট ১৮২ আসন পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল পেয়েছে ১৬৮টি। আর উগ্র ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র‌্যালির (আরএন) পেয়েছে ১৪৩টি আসন। এছাড়া কনজারভেটিভ রিপাবলিক পেয়েছে ৬০টি আসন।

ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুযায়ী তিন পক্ষের কেউই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে। যদিও তিন পক্ষের একসঙ্গে কাজ করারও নজির নেই। এ অবস্থায় ফ্রান্সে এখন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে রোববারের (৭ জুলাই) প্রাথমকি ফলাফল ঘোষণার পর দেশটির নিউ পপুলার ফ্রন্টের সমর্থকেরা রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর মিছিল করেছে।

নিউ পপুলার ফ্রন্টের নেতারা বলছেন, জনগণের কাছে দেয়া অঙ্গীকার তারা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্রুত বাম জোটকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন বলে আশাবাদী সমর্থকরা।

গত রোববার (৩০ জুন) ফ্রান্সে প্রথম ধাপের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় লাভ করে মেরিন লে পেনের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন)। অন্যদিকে প্রায় ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পায় বামপন্থি দলগুলোর জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। ম্যাক্রোঁর দল ২০.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে যায়।


আরও খবর



জর্ডান সীমান্তে বন্দুকধারীর হামলায় ৩ ইসরায়েলি নিহত

প্রকাশিত:রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

জর্ডান সীমান্তে বন্দুকধারীর হামলায় ৩ বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) অ্যালেনবি ব্রিজ সীমান্তের কাছে এই ঘটনা ঘটেছে। এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হামলাকারীও নিহত হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

একটি বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, এক সন্ত্রাসী ট্রাকে করে জর্ডান থেকে অ্যালেনবি ব্রিজের কাছে এসেছিল। ট্রাক থেকে নেমে সেতুতে কর্মরত ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সে।

এতে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে। বন্দুকধারীর হামলায় তিন ইসরায়েলি বেসামরিককে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে, হামলাকারী পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এই হামলার পেছনে উদ্দেশ্য কী তা জানা যায়নি। বর্ডার ক্রসিংটি কিং হোসেন ব্রিজ নামেও পরিচিত। এটি মৃত সাগরের উত্তরে আম্মান ও জেরুজালেমের মাঝখানে অবস্থিত।


আরও খবর



রাণীশংকৈলের সেই ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তার দুর্নীতির ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
উপজেলা প্রতিনিধি

Image

দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেননা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) বিরুদ্ধে। সেই কারণে প্রতিনিয়ত ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হতে হয় দুই ইউনিয়নের ভুমি সেবা গ্রহীতাদের। সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ তো দূরের কথা সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে কোনো কথায় বলেন না । এবার সেই ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে টাকা গুণে গুণে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে সেই ভূমি অফিসের সহকারী রেজাউল করিমকে।

ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়-কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতির কারণে এখানে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ভূমি অফিসের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার)  রেজাউল করিম নিজ দপ্তরে বসে সেবাগ্রহীতাদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ (ঘুষ) গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এলাকাবাসী। ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারা। বলছেন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না ভূমি কর্মকর্তা রেজাউল করিম।

স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম জানান, যে জায়গা খারিজ করতে তিন হাজার টাকা লাগে সেখানে দশ থেকে পনের হাজার টাকা দিতে হয়। শুধু তাই নয় টাকা নিয়েও কাজ করে দিতেও হয়রানি করে। মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী দুজনে মিলে লুটেপুটে খাচ্ছে।

অভিযুক্ত রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ভূমি উন্নয়ন কর সেবা বিনিময়ে ঘুষ নেয়ার ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোলেমান আলী গত এক সেপ্টেম্বর তারেক হাসান তাহসিন সহকারী কমিশনার ঠাকুরগাঁওকে এ নিয়োগ দেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে এই তথ্য  নিশ্চিত করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা তারেক হাসান তাহসিন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা তারেক হাসান তাহসিন জানান, অভিযুক্ত তহসিলদার রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনা চিঠি প্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ভিডিও ক্লিপসহ তথ্যাদির সাহায্য নেয়া হবে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো কয়েকদিন সময় বেশি লাগতে পারে মর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।


আরও খবর



ড. ইউনূসের দুর্নীতি মামলা সম্পর্কিত শুনানির নতুন তারিখ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৯ আগস্ট ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৯ আগস্ট ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলা তুলে নেওয়া আইনসম্মত ছিল কিনা, এ বিষয়ে শুনানির জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে, গত ১১ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে খালাস পান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওইদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ আদেশ দেন।

তারও আগে গত ৭ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা থেকে ড. ইউনূসকে খালাস দেন আদালত। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

গত ১২ জুন শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সবশেষ গত ১১ আগস্ট ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী মামলার প্রসিকিউশন প্রত্যাহারের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে আবেদন করে। পরে শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম ড. ইউনূসকে দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস দেন।


আরও খবর



অবশেষে কক্সবাজার নার্সিং ও মিড‌ওয়াইফারি কলেজের শিক্ষকদের পদত্যাগ

প্রকাশিত:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | হালনাগাদ:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
মোহাম্মদ ফারুক, কক্সবাজার

Image

টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে কক্সবাজার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের ৫ শিক্ষককে অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষকরা পদত্যাগ করেন।

জানা যায়, কক্সবাজার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ফ্যাকাল্টির পুরো কমিটির পদত্যাগ চেয়ে একদফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবি না মেনে উল্টো নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছেলে শিক্ষার্থীরা অতর্কিত হামলা করে- এমন অভিযোগ এনে রবিবার বেলা ৩টায় ৫ শিক্ষিকা এবং ১১ ছাত্রকে প্রতিষ্ঠানের ওয়াশরুমে আটকে রাখা হয়। যার সূত্র ধরে দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, র‍্যাব এসে বৈঠক শেষে সকল শিক্ষক পদত্যাগ করে কলেজ থেকে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জিআরএম জিহাদুল ইসলাম এবং ডা. আশিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার আশিকুর রহমান বলেন, কয়েক ঘণ্টা বৈঠকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি শিক্ষকরা মেনে নিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগ করেছেন সকল শিক্ষক। এখন কলেজটি শিক্ষক শূন্য হয়ে গেছে। কীভাবে এই সংকট দূর করা যাবে সেটি নিয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেছেন।

এ বিষয়ে আন্দোলন সমন্বয়কারী শিক্ষার্থী উর্মী আক্তার বলেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছিলাম। যেহেতু দুর্নীতিতে পুরো ফ্যাকাল্টি জড়িত ছিল তাদের পদত্যাগ আমরা চেয়েছি। আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট কিন্তু আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। যেহেতু শিক্ষক শূন্য হয়ে গেল সেহেতু আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক।

নিউজ ট্যাগ: কক্সবাজার

আরও খবর



মায়ের নামে ফাউন্ডেশন খুলেও দুর্নীতি করেছেন কবির বিন আনোয়ার

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৭ আগস্ট ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৭ আগস্ট ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

Image

নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন কবির বিন আনোয়ার। অথচ প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়াই করেননি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে পরিচিতি পেলেও দাপট ছিল সব মন্ত্রণালয়েই। যা বলতেন তাই আদায় করে নিতেন।

মায়ের নামে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন খুলে নীরব চাঁদাবাজি আর ঘুস বাণিজ্যের হাট বসিয়েছিলেন। বিদেশি সাহায্যের নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের নামে। দীর্ঘদিন পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার ও পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ-পদবি না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্য একটি দপ্তরে কর্মরত এক নারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পোস্টিং দিয়ে নিজের কাছে রাখেন। ওই নারী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সময়ে একজন ক্যাডার কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন। লায়লা সানজিদা নামের ওই নারীকে অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার পদ দিয়ে বছরের পর বছর নিজের দপ্তরে সংযুক্ত রাখেন, যা ছিল নজিরবিহীন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তূর্য নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে রাজা-বাদশাহর মতো এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন অবলীয়ায়। আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রী থাকলেও কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পিতার পরিচয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন কবির বিন আনোয়ার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।

কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চাকরি হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারতেন না। এভাবে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প ভাগিয়েছেন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে যে কজন আমলা থেকে শত শত কোটি টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে কবির বিন আনোয়ার অন্যতম।

কামারখন্দ গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ক্ষমতার দাপটে গ্রামের বাড়ির মানুষের যে ক্ষতি করেছেন তিনি তা কোনো শত্রুও করবে না। কী ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন নামে একজন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ড্রেজিংয়ের নামে শত শত বিঘা জমিতে নদীর পানি মিশ্রিত বালি ফেলে শেষ করে দিয়েছেন। তার দাপটেই ঠিকাদাররা এই কাজ করেছে। এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ ডেকে শত শত মানুষকে এলাকাছাড়া করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তার এই কাণ্ডে কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।

সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে চলাচল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানতেন। তাদের মাধ্যমে নানারকম অপরাজনীতি সংঘটিত করতেন। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সংঘর্ষ ও হানাহানির মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই আমলা।

তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করতে বাধ্য করতেন। বিগত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কামারখন্দ উপজেলায় তার অনুগত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম রেজাকে বিজয়ী করার জন্য অবৈধভাবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন তাকে মৌখিকভাবে সতর্কও করেছিল। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারকে চাপ প্রয়োগ দিয়ে তার প্রার্থীকে যে কোনো মূল্যে বিজয়ী করতে প্রভাবিত করেন। তিনি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করেন। এভাবে তিনি তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেন।

এমনকি বিজয়ীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শপথ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পূর্বঘোষিতভাবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সচিব কবির বিন আনোয়ার অতর্কিত উপস্থিত হয়ে শপথ কার্যক্রম পরিচালনার ইচ্ছা পোষণ করেন। এতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সবাই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান।

বিগত বন্যাকালীন উপজেলায় বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণসামগ্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চাপ প্রয়োগ করে নিজের প্রতিষ্ঠান ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নামে বিতরণ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং প্রকল্প উদ্বোধন করতেন।

লুটপাটের চিত্র : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন তার আত্মীয়স্বজনদের ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন কবির বিন আনোয়ার। তাদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ২০১২ সাল থেকে সিনিয়র সচিব হিসাবে চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত সব প্রকল্প তদন্ত করলে শত শত কোটি টাকা লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা মানিক চৌধুরী। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

সেই অভিযোগটি আমলে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অভিযোগে তিনি সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিগত কয়েক বছরের বরাদ্দ তদন্তের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বরাদ্দের মধ্যে অন্তত আড়াইশ কোটি টাকার কাজ অবৈধভাবে তার আত্মীয়স্বজন ও অনুসারীদের দিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।

সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার সয়াগোবিন্দ পাড়ার সুলতান মাহমুদকে ৭০ কোটি টাকা, হোসেনপুরপাড়ার জাকির হোসেনকে ৬০ কোটি টাকা, দিয়ারধানগড়ার নাছিমুর রহমানকে ৪০ কোটি টাকা, হোসেনপুরপাড়ার জাকির হোসেনকে ২৫ কোটি টাকা, স্টেডিয়াম রোডের রাশেদ ইউসুফ জুয়েলকে ১০ কোটি টাকা, রেলওয়ে কলোনি (চামড়াপট্টি) আব্দুল্লাহ বিন আহমেদকে ২০ কোটি টাকার কাজ, দত্তবাড়িপাড়ার হোসেনকে ২০ কোটি টাকার কাজ, সমাধানগড়াপাড়ার শামসুজ্জামান আলোকে ২৫ কোটি টাকার কাজ, জানপুরের বদরুল আলমকে ১২ কোটি টাকা, কামারখন্দ উপজেলার পেছরপাড়া গ্রামের সেলিম রেজাকে ৮০ কোটি টাকার কাজ, ঝাঐলগ্রামের হীরাকে ৩০ কোটি টাকার কাজ, নান্দিনা মধু গ্রামের সানোয়ারকে ১৫ কোটি টাকার কাজ সাবকন্ট্রাক্টে ভাগ করে দিয়ে লুটপাটে ভাগ বসিয়েছেন।

আবার এদের প্রধান করেই মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসীদের নির্মূলে গ্রুপ করে দিয়েছেন। অথচ এরাই এলাকায় বিতর্কিত। তারা নিন্মমানের কাজ করে এবং কিছু কিছু কাজ একেবারেই না করেও প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন। কবির বিন আনোয়ারের বোনজামাই হিলটনের ভাই শামিমুর রহমান শামিমের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ার দুর্নীতিসহ সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করে কবির বিন আনোয়ারের মাদক পার্টনার হিরন, চাচাতো ভাই তরুন ও আরিফ। তার আত্মীয়স্বজনের সিন্ডিকেট ঠিকাদারিসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ব্যাপারেও ব্যাপক দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ করেন।

তিনি চাপ প্রয়োগ করে অবৈধভাবে প্রকল্প তৈরির সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের দিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশেষ জরুরি আখ্যা দিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া না করে সরাসরি বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাজ দেন। তাছাড়া প্রকল্প চলাকালেও দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ মাত্রাতিরক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেন। তার আমলে এভাবে শুধু অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমেই ত্রিশ হাজার কোটি টাকা লুট করার অভিযোগ করা হয়েছে।

শুধু সিরাজগঞ্জেই প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ-ছয়গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণে প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে ১২ কোটি থেকে ১৭ কোটি স্বাভাবিক ব্যয় আকস্মিকভাবে ৭৩ কোটি টাকা করা হয়। তার আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তাদের পুকুর খননে প্রশিক্ষণ নিতেও বিদেশ পাঠানোর নজির রয়েছে। নদী খননের জন্য ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ১২৯২ কোটি ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেক সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। পানিসম্পদ সচিব পদে যোগদানের পর বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।