ফিলিস্তিনের
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার উত্থাপন করা প্রস্তাব
খারিজ হয়ে গেছে। খসড়া প্রস্তাবে মানবিক কারণে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি সব জিম্মির মুক্তি,
সহায়তা প্রবেশের সুযোগ ও বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ চাওয়া হয়। জাতিসংঘের
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়।
গতকাল সোমবার
জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপন
করেন। এটি পাসের জন্য স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ৯ ভোট পাওয়া আবশ্যক
ছিল। কিন্তু প্রস্তাবের পক্ষে মাত্র চারটি রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি রাষ্ট্র
বিপক্ষে ভোট দেয়। উপস্থিত আরও ছয় সদস্য রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ছিল নিরাপত্তা পরিষদের সোমবারের বৈঠকের মূল ইস্যু। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, বৈঠকে রাশিয়ার পাশাপাশি ব্রাজিলও এই ইস্যু-সংক্রান্ত খসড়া একটি রেজল্যুশন উত্থাপন করেছে এবং সেটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি। ব্রাজিলের সেই রেজল্যুশনে এই হামালার জন্য হামাসকে নিন্দা জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাব
পাসে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে এর জন্য ‘পশ্চিমা গোষ্ঠীর স্বার্থপর মানসিকতাকে’ দায়ী করেন জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী
প্রতিনিধি নেবেনজিয়া। নেবেনজিয়া আরও বলেন, ‘গাজায় নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার উচ্চঝুঁকির বিষয়ে
আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’
রাশিয়ার প্রস্তাবের
বিপক্ষে পাশাপাশি ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য, জাপান ও ফ্রান্স।
ভোটদানে বিরত ছিল আলবানিয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, ঘানা, মাল্টা ও সুইজারল্যান্ড। আর প্রস্তাবের
পক্ষে রাশিয়ার সঙ্গে চীন, গ্যাবন, মোজাম্বিক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভোট দেয়।
ভোট শেষ হওয়ার
পর জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের দূত বারবারা উডওয়ার্ড রাশিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,
‘আমরা
এমন কোনো প্রস্তাব সমর্থন করতে পারি না, যা হামাসের সন্ত্রাসী হামলাকে নিন্দা জানাতে
ব্যর্থ।’
আর ইসরায়েলি
রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ‘যেকোনো প্রকার মানবিক সহায়তা, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি স্থাপনের আগে নিরাপত্তা
পরিষদের উচিত হবে হামাসকে নিন্দা জানানো।’
গত ৭ অক্টোবর
ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে লাগাতার রকেট
হামলা করে হামাস এবং ভোরের আগেই দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন শত শত সশস্ত্র
হামাস যোদ্ধা।
হামাসের হামলায় প্রথম দিনই কয়েক শ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্য দেশের নাগরিকও আছেন, যাঁদের অধিকাংশই বেসামরিক। এ ছাড়া হামাস দেড় শতাধিক মানুষকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে বলে ইসরায়েল বলছে।
আরও পড়ুন>> বেলজিয়ামে গুলি করে দুই সুইডিশ নাগরিককে হত্যা
নজিরবিহীন হামলায়
অপ্রস্তুত অবস্থা কাটিয়ে পাল্টা হামলায় নেমেছে ইসরায়েল। লাগাতার ও ব্যাপক বিমান হামলায়
গাজার হাজার হাজার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি, বিদ্যুৎসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ
করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর গাজা থেকে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
যে কোনো মুহূর্তে স্থলভাগে সামরিক হামলা চালানোর অপেক্ষায় আছে তারা।
১০ দিনের এই
সংঘাতে ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আর গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা
৩ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।