কোটা আন্দোলনে
ছাত্র জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সিলেটের বেশিরভাগ
জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে রয়েছেন। গত সোমবার (৫ আগস্ট) থেকে তাদের কার্যালয়ে, মুঠোফোনে
কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে
হচ্ছে জন-সাধারণের।
খোঁজ নিয়ে জানা
যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, ১৩টি উপজেলা পরিষদ, পাঁচটি পৌরসভা, ১০৬টি ইউনিয়ন
নিয়ে গঠিত। তবে গত সোমবারের পর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি নিজ কার্যালয়ে আসছেন না। ফলে জনগণের
সেবা ব্যাহত হচ্ছে পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও থমকে রয়েছে।
জানা যায়, জেলা
পরিষদ ও ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি তেই আওয়ামী লীগ পন্থি চেয়ারম্যান রয়েছেন। জেলার বেশিরভাগ
পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের রয়েছেন আওয়ামী পন্থি চেয়ারম্যান ও সদস্য। সিলেট
সিটি কর্পোরেশনের মেয়রও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন পাশাপাশি বেশিরভাগ কাউন্সিলর
ছিলেন একই দলের সমর্থক। গত সোমবারের পর বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে
কার্যালয়েও আসেন নি। মুঠোফোনেও পাওয়া যাচ্ছেনা তাদের। এতে এসব এলাকার জন গুরুত্বপূর্ণ
উন্নয়ন কাজ ধমকে রয়েছে। পাশাপাশি কার্যালয়ের সেবা পেতে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে। জন্ম
নিবন্ধনসহ অন্যান্য কাগজপত্রে চেয়ারম্যান, মেয়রের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়, অনেকে কার্যালয়ে
না আসার কারণে স্বাক্ষর করতে পারছেন না। এতে করে জন্ম নিবন্ধন করা গেলেও স্বাক্ষরের
কারণে সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। পাওয়া যাচ্ছেনা বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র। ফলে জরুরি
কাজগুলোও করতে পারছেন না সেবা প্রত্যাশীরা।
সিলেট জেলার
গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা রাফসান আহমেদ বলেন, জন্ম নিবন্ধন করতে দিয়েছিলাম।
এখন কার্যালয়ে আসলাম কিন্তু জন্ম নিবন্ধন প্রস্তুত থাকলেও শুধু মাত্র চেয়ারম্যানের
স্বাক্ষর না থাকার জন্ম নিবন্ধন নিয়ে যেতে পারছি না। চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে কল দিলেও
সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
একই অবস্থা
এই ইউনিয়নের সাজ্জাদ আহমেদের। তিনি বলেন, জমির একটি কাজের জন্য উত্তরাধিকার সনদের প্রয়োজন
গত এক সপ্তাহ থেকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে আসলেও চেয়ারম্যানকে পাইনি। এতে আমার জরুরি এই কাজ
আটকা পড়ে রয়েছে। একই অবস্থা এই ইউনিয়নে আসা সেবা গ্রহিতাদের।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক
আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পদ ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের বেশিরভাগ
জন প্রতিনিধি গা ঢাকা দিয়েছেন। সিলেটেও এর ব্যতিক্রম হয়নি, সিসিক মেয়র ও কাউন্সিলরগণ,
জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ পন্থি জনপ্রতিনিধি
আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা অনেকেই আওয়ামী সরকার থাকাকালীন সময় বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন,
তাই জনগণের রোষানলে না পড়ার জন্য গা বাঁচাতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ
নাগরিকের ওপরে। এ বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসনের কী
করণীয় তা নির্ধারণ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন,
আমি মনে করি দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
সিলেটের স্থানীয়
সরকার উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার বলেন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে কারা অনুপস্থিত রয়েছেন
তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের
নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।