মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে জেগে উঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজের। একটা সময় এই জমি গুলোতে গরু-মহিষের গোচারণ এবং ধান চাষ করতেন এখানকার কৃষকরা। এখন এসব জায়গায় তরমুজের চাষ হচ্ছে। তরমুজ চাষিরা ভালো ফলনের আশা দেখছেন।
জানা গেছে, প্রত্যেক বছর রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা, কাটাছরা ও শাহেরখালী ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকতো। পূর্ব ইছাখালী গ্রামে দোঁআশ মাটি (বালিযুক্ত) ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় এবং ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় গত বছরের তুলনায় এই বছরও পাশ্ববর্তী উপজেলার নোয়াখালী জেলার সুবর্ণ চর উপজেলার ১১ জন উদ্যোক্তা মিরসরাইয়ে আবারও তরমুজ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে তারা স্থানীয় কৃষকদের থেকে ৩ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকা খাজনায় বর্গা নেন। সেই জমিতে তারা তরমুজের বীজ বপন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৭৫ একরেরও বেশি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ লতার সমারোহ। বর্তমানে অধিকাংশ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি তরমুজের মুকুল এসেছে।
তবে স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমরাও তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী। কারণ নিজেদের জমিতে অন্য এলাকা থেকে আসা কৃষকরা বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। আমরা নিজেরা যদি চাষ করি তাহলে আমাদের এলাকা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে।
তরমুজ চাষী মো. মোশাররফ বলেন, গত বছর আমাদের নোয়াখালী উপজেলার সুবর্ণচর এলাকার কৃষকরা এখানে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আমাদের তরমুজ চাষের উপর জীবিকা নির্বাহ চলে। তাই আমরা ডিসেম্বরে শেষের দিকে ১১ জন মিলে ৭০ একর জমিতে তরমুজের চারাগাছ রোপণ করেছি। এখন গাছের চারায় ফুল এবং মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
আরেক চাষী মো. আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা নিজ উপজেলা সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছি। এই প্রথম মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা এখানে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের থেকে জমি বর্গা নিয়ে চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশীসহ ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করছি।
ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চাষীরা এবারও মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। তবে এইবার গত বছরের চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়াতে ফলন তেমন একটা ভালো হয় নাই।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষ হয়েছে বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি এখনো যায়তে পারে নাই। আগামী সপ্তাহে তরমুজের জমিগুলো পরিদর্শন করবো। আবহাওয়া উপযোগী থাকলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম অন্যান্য রবিশষ্য থেকে বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি অফিস থেকে স্থানীয় যারা তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী তাদেরকে নিয়ে ১২ মাসি তরমুজ চাষের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। সেখানে তাদেরকে তরমুজ চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ সর্ম্পকে তুলে ধরা হবে।