নরসিংদীর রায়পুরায় একটি সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমানে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির প্রতারণায় ফাঁদে পড়ে জমাকৃত টাকা না পেয়ে রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শরিফ মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী।
জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাটুভাঙ্গা এলাকায় “প্রভাতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটিড নামে একটি এনজিও খুলে বসেন স্থানীয় আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। এনজিও খুলে বসেই তিনি রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে বড় অংকের ঋণের লোভ দিয়ে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চয়। অনদিকে অধিক মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডিপিএস ও স্থায়ী আমানতের নামে শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় আরো কয়েক কোটি টাকা।
এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েই হঠাৎ করে এনজিওটির মালিক আবুল কালাম বন্ধ করে তার সমিতির কার্যক্রম। সমিতির সাইনবোর্ড নামিয়ে দিয়ে অফিস ঘরে দেয়া হয় তালা। এতে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত চান এনজিওর মালিক আবুল কালামের কাছে। কিন্তু তিনি দেই দিচ্ছি বলে তালবাহানা করতে থাকেন। একসময় জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকরা কালামের বাড়িতে গেলে তাদের সাথে করা হয় দুর্ব্যবহার।
সরেজমিনে সমিতির কার্যালয় রায়পুরা উপজেলা হাটুভাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সমিতির কার্যালয়টি ছিল সমিতির মালিক আবুল কালামের বাড়ির একটি ঘরে। আগে উক্ত ঘরের উপর সমিতির নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড থাকলেও এখন সেটাও খুলে ফেলা হয়েছে। ঘরে দেয়া হয়েছে তালা।
এদিকে সমিতিটির কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন তাদের ১২০ জন সদস্য রয়েছে। তারা প্রতিজনে ২/৩ হাজারের বেশি টাকা পাবেন না। সাময়িক সমস্যার কারণে তারা তাদের সমিতির কার্যক্রম আপাদত বন্ধ রেখেছেন। কার্যক্রম শুরু হলেই গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সমিতিটি সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত হয়। গত বছরের ১৬ মার্চ উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে সর্বশেষ অডিট করা হয়। তারা কেন কার্যক্রম বন্ধ করেছে তা তারা জানেনা।
কুন্দারপাঁড়া গ্রামের পুলিশ সদস্য তানিয়া আক্তার। তিনিও এ সমিতিতে ৫ হাজার টাকা জমা রেখেছেন। তিনি জানান, আমার এলাকার আরো ২০/২৫ জন সদস্য এখানে টাকা জমা রেখেছেন। তারা টাকা চাইতে গেলে খারাপ আচরণ করে। টাকা ফেরত দেয়না। আমি এ সমিতির লাইসেন্স বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিবো।
থানায় অভিযোগ দায়েরকারী শরিফ মিয়া বলেন, আমি এক কালীন ১৯ হাজার চারশ টাকা জমা দিয়েছি। বর্তমানে তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। টাকা ফেরত চাইলে খারাপ ব্যবহার করে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
প্রভাতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এর পরিচালক আবুল কালাম বলেন, আমাদের কার্যক্রম সাময়িক কিছু সমস্যার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী জুন মাস থেকে আবার কার্যক্রম শুরু করবো। গ্রাহকের টাকা কেন আটকে রেখেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সমস্যায় আছি। তাই গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছিনা। তবে কার্যক্রম চালু হলে ঠিকই তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
রায়পুরা থানারওসি মো.আজিজুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত অনুযায়ী সমিতিটির পরিচালকসহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.সালমান ইকবাল বলেন, এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।