
অস্টিওপোরোসিস
হচ্ছে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত একটা রোগ। এ রোগ হলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। ফলে হাড় ভেঙে
যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
মূলত ভিটামিন
ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়ার ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া বয়স বেশি হলে বংশগত
কারণে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাবে হাড়ক্ষয় রোগ হয়ে থাকে। তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও অনেকে বুঝতে পারেন
না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক
ওয়েবসাইট ‘ইটদিস ডটকম’র এক প্রতিবেদনে
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন’-এর ডা. আনিকা কে আনাম বলেন, ‘অস্টিওপোরোসিস’ হচ্ছে হাড়ের অসুখ। এই রোগে হাড় দুর্বল
হওয়া এবং এর গঠনগত মান কমে যাওয়ার কারণে তা ভাঙা কিংবা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক
বেশি। ফলে সামান্য দুর্ঘটনা থেকেই হাঁড় ভেঙে
যেতে পারে। রোগের মাত্রা যখন তীব্র হয়, তখন
সামান্য হাঁচি দেওয়ার কারণেও রোগীর বুকের হাড় ভেঙে যেতে পারে। আবার দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে গিয়েও হাড় ভেঙে যেতে
পারে।
বেশিরভাগ রোগী
প্রথমবার হাড় ফেটে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো লক্ষণই টের পান না। আর এই রোগে সাধারণত মেরুদণ্ড, নিতম্ব ও হাতের কব্জির
হাড়ে সবচাইতে বেশি ফাটল দেখা দেয়। তাই শরীরের
এই অংশগুলোতে ‘বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট’ করার মাধ্যমে হাড়ক্ষয় হয়েছে কিনা তা জানা
যাবে।
ডা. আনিকা কে.
আনাম জনান, বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট পরীক্ষায় সময় কম লাগে, এটি ব্যথাহীন ও নিরাপদ। এ পরীক্ষায় হাড়ের ঘনত্ব কম কিনা তা পরীক্ষা করা
হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণে হাড়ের ক্ষয় হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা
করা হয়।
এ রোগ হওয়ার কারণসমূহ
ডা. আনাম এ রোগের
প্রধান কারণ হিসেবে দ্বায়ী করেন বয়স বেশি হওয়া, বংশগত কারণ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
এর অভাব, ধূমপান ও মদ্যপান বেশি করা ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন,
এগুলো বাদে যকৃতের রোগ, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, ইনফ্লামাটরি বাওয়েল ডিজিজ, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড
ব্যবহার ইত্যাদিও হাড়ের ক্ষয়রোগের কারণ হতে পারে।
আবার ‘হাইপারথাইরয়েডিজম’, ‘অ্যানোরেক্সিয়া
নারভোসা’, বৃক্কের সমস্যা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত
রোগীদেরও ‘অস্টিওপোরোসিস’ হবার ঝুঁকি থাকে’।
তবে সব সম্ভাব্য
কারণের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টি হলো ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোনের অভাব। এটি নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তাই নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ রোগ সম্পর্কে
পরিসংখ্যান করে দেখা যায়, ৫০ বা তার বেশি বয়সের প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজনের এই
রোগে হাড় ফেটে থাকে।
এ রোগ প্রতিরোধে
করণীয়
এ রোগ প্রতিরোধ
করার বিষয়ে ডা. আনাম বলেন, হাড়ক্ষয় রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে হাড়ের সুস্বাস্থ্য
বজায় রাখার বিকল্প নেই। এ জন্য শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন সরবরাহ
করাতে হবে। এবং খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি।
দুধ ক্যালসিয়ামের আদর্শ উৎস। তবে এটি ছাড়াও আরও অনেক খাবার থেকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা জোগানো যেতে পারে। শরীরচর্চার গুরুত্বকেও অবহেলা করা যাবে না। নিয়মিত ভারোত্তোলন ও শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করা ভালো। বাদ দিতে হবে ধূমপান ও মদ্যপান।