উজান থেকে নেমে
আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও তিস্তা নদীর
পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জামালপুর ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের
বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
জামালপুর জেলার
ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে
তলিয়ে গেছে। ফলে তরিতরকারি, শাক-সবজি, বীজতলা, সদ্য রোপিত রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে
কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
জামালপুরের
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গতকাল বুধবার (৩০ আগষ্ট) এ তথ্য জানিয়েছে। জামালপুর পাউবোর নির্বাহী
প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে
যমুনা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হচ্ছে।
অপরদিকে বন্যা
মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা
আলমগীর হোসেন। অপরদিকে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও তিস্তা নদীর
পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল
গতকাল বুধবার (৩০
আগস্ট) বিকেল ৩টায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে
৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী
পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার
নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র
নদের পানি বেড়ে চিলমারী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার
নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি ক্রমেই আরও বাড়ছে যা খুব দ্রুত বিপৎসীমা
অতিক্রম করতে পারে।
ফলে কুড়িগ্রামে
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র
ও ধরলা নদীর ভাটিতে বিশেষ করে চরাঞ্চলের অনেকের বাড়ি ঘরে পানি থাকায় কষ্টে দিনাতিপাত
করছে। কাঁচা সড়কে পানি উঠে সেখানকার বাসিন্দাদের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কেউ কেউ কলার
গাছের ভেলায় চড়ে বাড়িতে আসা যাওয়া করছে।
এ অবস্থায় বন্যা
কবলিত মানুষজনের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার
পানি সংকট ও গবাদি পশু খাদ্য সংকট। নিচু জমির সদ্য রোপণকৃত আমন খেতের অনেক এলাকায় নিমজ্জিত
হওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। দু-দুবার আমন বীজতলাসহ আমনের খেত তলিয়ে যাওয়ায় এবার ক্ষতি
হয়ে গেলে কিভাবে কোথা থেকে আমনের বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে কৃষকদের
সংশয়। চরম ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন>> রক্তের বিনিময়ে আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি: প্রধানমন্ত্রী
এদিকে, নদী
ভাঙনের কবলে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও রাজারহাট উপজেলার নদী তীরবর্তী
বেশ কিছু স্থান। এ পর্যন্ত জেলার ৪০টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে বলে স্থানীয় পাউবো জানায়।
তবে বালুর বস্তা কিংবা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে সর্বদা চেষ্টা করছে জেলা পাউবো।
জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, চলতি বন্যায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় ১০৭ মেট্রিক
টন চাল, দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের
জন্য বরাদ্দ পেয়ে তা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।