হবিগঞ্জে ডা. এসকে ঘোষকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে জেলার সকল বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালসহ প্রাইভেট প্র্যাকটিস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার বিকেলে জেলায় দ্বায়িত্বরত চিকিৎসকদের এক সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মিঠুন রায়।
জানা যায়, সম্প্রতি ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডা. এসকে ঘোষকে কারাগারে পাঠায় হাইকোর্ট। একই সাথে প্রাইভেট ক্লিনিক ‘দি জাপান বাংলাদেশ’ হাসপাতালের মালিকসহ আরো তিনজনকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা। জেলা শহর ও দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে চিকিৎসক না থাকায় বিপাকে পড়েছেন।
অপরদিকে, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা না পেয়ে ২৫০ শয্যা হবিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভির করছেন রোগীরা। সেখানেও রোগীর চাপ বাড়ায় চিকিৎসা নিতে পড়ছেন ভোগান্তিতে।
হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। শুধু প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকবে। আগামী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালন করা হরে।’
উল্লেখ্য, রহিমা খাতুন নামে এক নারী জরায়ুর টিউমার অপারেশনের জন্য ওই হাসপাতালে যান। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ওই নারীর অপারেশন করেন গাইনি ডাক্তার এসকে ঘোষ। আর ১২ তারিখই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বাড়ি গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরবর্তী সময়ে আবারও এই হাসপাতালে আসেন ওই নারী। এ সময় তাঁর অবস্থা বেগতিক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয় তাঁকে।
এদিকে ওসমানী হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখা যায় ওই নারীর বাম পাশের কিডনি ও জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ অক্টোবর মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় ২৪ অক্টোবর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। যাতে ওই নারীর ভুল চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে দালালের মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ আনা হয় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
এদিকে এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগের খবর মিলেছে বিভিন্ন সময়। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি নানা অভিযোগে এতে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় অ্যানেসথেসিয়া ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া স্টাফ নার্স ও আয়া দিয়ে সিজার অপারেশন করানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়ায় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলামকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু ও সন্তান বদলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি। এ ছাড়া সিজারের সময় গত ১ অক্টোবর পেটের ভেতরে থাকা নবজাতকের মাথা কেটে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে।