২০১৩ সালে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরের মতো ভয়াবহ নাশকতা চালিয়ে আসছিল হেফাজত। এসব ঘটনায় মামলা হলেও সেসব মামলার তদন্ত নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলামের নানা কর্মসূচির নামে চালানো নাশকতার মামলাগুলো অতি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। নাশকতায় জড়িতরা যাতে কোনো ধরনের ছাড় না পায় এবং তদন্তে যাতে ফাঁকফোকর না থাকে, সে জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি ঝুলে থাকা মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করারও চিন্তা রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে এরই মধ্যে হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ২৩টি মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে। গত রবিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসব মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরের মতো ভয়াবহ নাশকতা চালিয়ে আসছিল হেফাজত। এসব ঘটনায় মামলা হলেও সেসব মামলার তদন্ত নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ঢাকাসহ সারাদেশে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দেড় শতাধিক। এর মধ্যে মাত্র চারটি মামলার তদন্ত শেষ করতে পেরেছে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলাগুলো তদন্ত করছে। তবে অগ্নিসংযোগ, ডিভাইস ব্যবহার করে লোকজনকে জড়ো করা এবং ভাঙচুরের মতো ঘটনায় প্রয়োজনীয় ফরেনসিক আলামত সংগ্রহ ও তা পরীক্ষাসহ যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি তদন্ত কর্মকর্তাদের। এ জন্য নিবিড় তদন্ত এবং প্রযুক্তিগত ও ফরেনসিক প্রমাণের জন্য ২৩টি মামলা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো সিআইডি মূলত নাশকতার ঘটনার ফরেনসিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়টি প্রমাণ করবে। দায়িত্ব পাওয়ার পর এরই মধ্যে আলামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভিডিও সংগ্রহ ছাড়াও গণমাধ্যম থেকেও ফুটেজ নেওয়া হচ্ছে। সিআইডিপ্রধান বলেন, ফরেনসিক তদন্তে নাশকতার প্রমাণ করতে পারলে অপরাধীদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
সিআইডি সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ টানা তিন দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতকর্মীরা। ওই নাশকতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানায় ১০টি মামলা হয়। ২০১৬ সালেও হেফাজতসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠন ওই জেলায় তাণ্ডব চালায়। এসব ঘটনায়ও পাঁচটি মামলা হয়। ওই ১৫টি মামলা এত দিন জেলা পুলিশ তদন্ত করে এলেও তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে। এ ছাড়া স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উৎসবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মাসের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর এবং চলিত মাসের শুরুর দিকে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে নাশকতা চালায় হেফাজত ও তাদের সমর্থকরা। প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ও সিরাজদীখানেও নাশকতা চালানো হয়। ওই ঘটনাগুলোতে দায়ের করা আটটি মামলার তদন্তভারও সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, সম্প্রতি হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৫৫টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আগেরও বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এত দিন ধরে এসব মামলা জেলা পুলিশ তদন্ত করে আসছিল। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় বেশ কিছু মামলার তদন্তের দায়িত্ব অন্যান্য তদন্ত সংস্থার মধ্যে বণ্টন হয়েছে। সিআইডি ছাড়াও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভাগও বেশ কিছু মামলার তদন্ত দায়িত্ব পেয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করার সুযোগ রয়েছে। তাই যেসব ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ ইউনিট বা কর্মকর্তার সংশ্নিষ্টতা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেফাজতের তাণ্ডব ও নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মনিটর করছে পুলিশ সদর দপ্তর। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাই তদন্ত সংস্থার লক্ষ্য। তাই প্রয়োজন ও গুরুত্ব বিবেচনায় বেশ কিছু মামলা এরই মধ্যে সিআইডি ও পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার প্রযুক্তিগত ও ফরেনসিক তদন্তের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।