কিন্তু এবার সেই সব অতীত সোনালী অধ্যায় ম্লান করে দিয়েছে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ সি, এস, সি
ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ। শিক্ষা বিস্তার ও মানুষ গড়ার জন্য এ বিদ্যালয়ের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস। রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ এই স্কুলের প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্র, শিক্ষকসহ মোট ৩০ জনকে পাক হানাদার বাহিনী জগন্নাথ কলেজ সংলগ্ন আর্মি ক্যাম্প এ ধরে নিয়ে যায় ও নির্মম ভাবে হত্যা করে। এই দিন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক পি ডি কস্তাসহ আরো একাধিক শিক্ষক কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করে বাংলাদেশ তথা বিশ্বে আলো বিতরণ করে যাচ্ছেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, রাজনীতিবিদ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কামাল হোসেন, জামিলুদ্দিন হাসান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও জামিলুর রেজা চৌধুরী মত গুণীজনেরা রয়েছেন।
কিন্তু এবার সেই সব অতীত সোনালী অধ্যায় ম্লান করে দিয়েছে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ সি, এস, সি। গত ১৫ ডিসেম্বর ( বৃহস্পতিবার) ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ স্বাক্ষরিত শিক্ষকদের জন্য দেওয়া এক নোটিশে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব/বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদেরকে শ্রেণিকক্ষ বা ক্যাম্পাসে এই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ স্বাক্ষরিত সেই নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।
তাছলিম আহমেদ নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী নোটিশটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নোটিশটা সত্যি হলে দুর্ভাগ্যজনক - এমন গ্রেগরী হয়তো আমরা চাইনি।’
মোসাদ্দেক সম্রাট মাওলা নামে একজন লিখেছেন, আমাদের পবিত্র স্কুল কোন ধর্ম বিদ্বেষী মানুষের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় বরং এই স্কুল আমাদের প্রতিটি গ্রেগোরিয়ানদের। তাই এই স্কুলের সুনাম রক্ষা করা আমাদের প্রতিটি গ্রেগোরিয়ানদের পবিত্র দায়িত্ব।
সাইমুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আমাদের স্কুল আমাদের সম্প্রীতি শিখিয়েছে যা আমরা এখনও বুকে ধারণ করি। আমাদের স্কুল আমাদের সহাবস্থান শিখিয়েছে যা আমরা এখনও মেনে চলি। মানের অবক্ষয় মনের সান্ত্বনার প্রলেপে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা যায় তবে মানসিকতার অবক্ষয় এত সহজে মেনে নেয়া যায় কি?
মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা তাপস নামে এক অভিভাবক লিখেছেন, ‘পুরান ঢাকায় থাকি। কয়েকবছর আগে আমি আমার প্রাণের প্রিয় স্কুল 'সেন্ট গ্রেগরি' থেকে আমার ছেলেদের সরিয়ে ঢাকার আরেক প্রান্তের অন্য স্কুলে নিয়েছিলাম। যা আমার সন্তানদের জন্য ছিল শারীরিক এবং মানসিক ভাবে খুব কষ্টকর এবং আমার জন্য চরমভাবে ব্যায়বহুল...বাচ্চাদের সরানোর কারণে ওই সময় এবং এখনও অনেক বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয় অনেক সিনিয়র Gregorian এর কাছথেকে... আশাকরি এইবার বুঝতে পারছেন কতটা মনের কষ্টে আমি আমার ছেলেদের সারিয়েছিলাম এখান থেকে। মনে রাখবেন তেলহীন প্রদীপ কখনো আলো ছড়ায় না। আপনারা অনেকই আবার এর তুলনা করেন ব্রাদার রবি'র সাথে...’
ফয়সাল প্রবাল নামে একজন লিখেছেন, তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তীব্র তিরস্কার জানাচ্ছি। ধর্মবিদ্বেষী এই ব্রাদারের দ্রুত অপসারণ চাই।
এবিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ সি, এস, সি সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা চলতে থাকে। তবে ২০০৮ সালের দিকে আবার ইংরেজি ভার্সন চালু করা হয়। ২০১৬ সালে স্কুলটিকে কলেজে উন্নীত করা হয়।