নওগাঁর মহাদেবপুরে
হিজাব পরে স্কুলে আসায় ২০ ছাত্রীকে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত
বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমোদিনী পাল
২০ ছাত্রীকে পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা ।
এর জেরে কয়েকশ’ অভিভাবক গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল)
দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে
তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
আনে।
এ বিষয়ে সংবাদ
প্রকাশে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।
নির্যাতনের শিকার
ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার দুপুরে জাতীয়
সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল কেন হিজাব
পরে স্কুলে এসেছি জিজ্ঞাসা করেই ইউক্যালিপ্টাস গাছের ডাল দিয়ে পেটাতে থাকেন।
সাদিয়া বলেন,
শিক্ষিকা তাদেরকে বলেছেন, ‘স্কুলে কোনো পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছ।
বাসায় গিয়ে কি বোরকা পরে থাক? যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে
এলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে। তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। যারা
হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পরে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, কাল থেকে
যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী সাদিয়া
আরও বলেন, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি
ভেঙে যায়। এছাড়াও দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ
কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়।
সাদিয়ার মা সাবেরা
বেগম জানান, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে বলে যে, হিজাব পরার জন্য ম্যাডাম
মেরেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের
মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি
এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে
অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।
ঘটনার সত্যতা
জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনী পালের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার
পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে অনেক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত অপর
শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পরায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষিকা আমোদিনী পাল মারধর করেছেন।
তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।
ওই বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে হিজাব পরে আসায়
শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী
শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন। এ বিষয়ে তাকে
শোকজ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীদের পেটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আগে তাকে শোকজ করা হবে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।