আজ গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে
ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৫ বছর। ২০১৬ সালের আজকের এ দিনে গুলশান ২ নম্বরে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট
জিম্মি করে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। বিশ্বব্যাপী আলোচিত ভয়াবহ ওই ঘটনার
পাঁচ বছর হলেও মামলার বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলায় ৭ আসামিকে
মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। এরপর আসামিরা সবাই জেল আপিল
করে। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের রায়ে খালাস পাওয়া একজনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
হাইকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, আপিল শুনানির
জন্য এক বছর আগে পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির শুনানির জন্য এখনো
হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি বছরই শুনানি
হতে পারে।
এ বিষয়ে বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম
আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু এটি ডেথ রেফারেন্সের মামলা। ডেথ রেফারেন্সের
মামলাগুলো তালিকা অনুযায়ী শুনানির জন্য আসে। করোনার কারণে গত বছর মার্চের পর থেকে স্বাভাবিক
আদালত হচ্ছে না। সেই কারণে মামলাগুলো শুনানির জন্য উঠতে দেরি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক
হলে আমি মামলাটি মেনশন করব। এ বছরের মধ্যে মামলাটি শুনানি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান ২
নম্বরে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট জিম্মি করে ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। জঙ্গিরা প্রত্যেকেই
ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছেড়েছিল। গুলশানে ওই জঙ্গি
হামলা নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশের ২ কর্মকর্তা মারা যান।
পরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী,
নৌবাহিনীর সোয়াত টিমের সহযোগিতায় অপারেশন থান্ডারবোল্ড নাম দিয়ে অপারেশন চালানো হয়।
কিন্তু কোন জঙ্গিকে জীবিত অবস্থায় আটক করা সম্ভব হয়নি।
দেশের ইতিহাসে এটি ছিল সব চেয়ে বড় জঙ্গি
হামলা। এ হামলার পর দেশে নব্য জেএমবি আলোচনায় আসে। গুলশানে হামলার পর ঢাকাসহ দেশের
বিভিন্ন এলাকায় নাম দিয়ে এবং নাম ছাড়াও শতাধিক সশস্ত্র অভিযান চালানো হয় জঙ্গি আস্থানায়।
হলি আর্টিজানের ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা
দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্ত করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল
ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। ওই হামলায় মোট ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় সিটিটিসি। এর মধ্যে
পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই কমান্ডো অভিযানে মারা যায়। এছাড়া হামলার পরবর্তী পুলিশ ও র্যাবের
বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় আরও আটজন। জীবিত বাকি ৮ জনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই
আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর ২০১৮
সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। মামলাটিতে
মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রায়
ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর
রহমান আট আসামির মধ্যে সাতজনকে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলো— জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যা শ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। আদালতের রায়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অন্য ধারাতেও ভিন্ন ভিন্ন সাজার আদেশ দেওয়া হয়। তবে আদালত মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে সকল ধারা থেকেই খালাস দেন।