পঞ্চগড়ে গণমিছিলে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে আব্দুর রশিদ আরেফিন (৪৫) নামের এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ বিএনপির। তবে পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মিছিলে অংশ নেওয়া যুবদলকর্মী আব্দুস সবুর বলেন, মিছিল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে নেয় এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। তারা কাদানে গ্যাস ছোড়ে। আমরা পালানোর চেষ্টা করি। নিহত আরেফিনও পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ আমাদের বেধড়ক মারধর করেন। আরেফিন সেখানেই অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদেশের মতো পঞ্চগড়েও গণমিছিল বের করা হয়। কিন্তু পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দেয়। এতে বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন মারা যান। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি পাথরাজ এলাকায়। রশিদের মরদেহ দলীয় নেতাকর্মীদের দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে এটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। এছাড়া মিছিল থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপির এ নেতা।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করি। পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের ঠেলতে শুরু করে এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ আমাদের ধাক্কা দেয় এবং আমাকেও দুটি বাড়ি দেয়। এ সময় পেছন থেকে নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তবে শনিবার রাতে এক প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল না করায় পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শাট গানের ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে। সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ১০-১২ জন সদস্য এবং তাদের ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছে। রশিদ আরেফিন নামের এক ব্যক্তি নিহতের অভিযোগ করেছে বিএনপি। তবে তিনি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাননি। তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তার বেশ কয়েকবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে।
সিরাজুল হুদা বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা ছিল বিকেল সাড়ে ৩টায় আর মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুপুর আড়াইটায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ইসিজি করা হয় এবং জানা যায় তিনি মারা গেছেন। রশিদের পরিবার এবং হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তিনি হৃদরোগ ও স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছেন।
আরেফিনের ভাই আবুল কালাম আজাদ লিটন বলেন, আমার ভাইয়ের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে। তবে তিনি সুস্থ ছিলেন এবং গণমিছিলে এসেছিলেন বলে জেনেছি। আমাকে বল হয়েছে রোববার মরদেহের সুরতহাল করা হবে। এরপর ভাইয়ের মরদেহ বুঝে পাবো বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন রফিকুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে বিকেল ৪টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বুকে প্রিভিয়াস সার্জারির দাগ ছিল। ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।