
সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত
রাখতে ইসলাম বদ্ধপরিকর। প্রাক-ইসলামি যুগে নারীর যখন কোনো সামাজিক অধিকার ও সম্মানবোধ
ছিল না, যখন নবজাত কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো এবং পুরুষেরা নারীকে শুধু ভোগের
জন্য ব্যবহার করত, তখন মহানবী (সা.) সৎকর্মে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদার কথা বললেন।
তিনি মানুষকে জানিয়ে দিলেন, ‘পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে
ও মোমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে
না।’ (সুরা আন-নিসা
: ১২৪)।
জাহেলি যুগে নারীদের মানুষ ও পশুর মাঝামাঝি
একটি জীব বিশেষ মনে করা হতো। যার উদ্দেশ্য হলো মানুষের বংশ বৃদ্ধি এবং পুরুষের সেবা
করা। আর এ জন্যই কন্যাসন্তানের জন্মগ্রহণ লোক সমাজে শরম ও লজ্জার কারণ ছিল। ভূমিষ্ঠ
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে জীবন্ত কবর দিত এবং এটাকেই গৌরব ও আভিজাত্যের বিষয় হিসেবে
মনে করা হতো। এ ব্যাপারে আল কোরআনের হুঁশিয়ারি হলো, ‘যখন জীবন্ত কবরস্থ
কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।’ ( তাকভির : ৮-৯)।
সমাজের সর্বত্র অবলা নারীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন
চালানো হতো। জোর জবরদস্তি করে তাদের ভোগ করা হতো। তাদের ধারণা ছিল, নারীরা হলো ভোগের
সামগ্রী। নারীদের তাদের মাসিক ঋতুকালীন সময়ে গবাদি পশুর মতো গোয়াল ঘরে বা আস্তাবলে
বেঁধে রাখা হতো। মানুষ হিসেবে তাদের অধিকার দেয়া হতো না।
জীবজন্তু, অন্যান্য প্রাণী ও নারীদের মাঝে
কোনো পার্থক্য ছিল না। আরবের এই বর্বর জাতির অবস্থা স্বয়ং আল কোরআন থেকেই জানা যায়।
নারী জন্মের পর পিতাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্বয়ং কোরআনের বর্ণনা, ‘তাদের কাউকে যখন
কন্যাসন্তান জন্মনোর সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং এক অসহনীয়
মর্মবেদনায় ভুগতে থাকে। তাকে যে কন্যা জন্মানোর সংবাদ দেওয়া হয়েছে, তার লজ্জায় সে মানুষ
থেকে লুকিয়ে থাকত। সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও সে কী তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে
ফেলবে?’ (সুরা নাহল
: ৫৮-৫৯)।
যেসব পিতা-মাতা অপমানের গ্লানি নিয়ে সন্তান
হত্যার অপরাধে লিপ্ত, তাদের হুঁশিয়ার করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা বনি ইসরাইলের
৩১নং আয়াতে বলেছেন, ‘দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের
হত্যা করো না। আমিই তোমাদের ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি।’ (বনি ইসরাইল
: ৩১)।
ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীকে
পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে, অত্যন্ত সম্মানজনক মর্যাদা দিয়েছে। কবির ভাষায়
‘বিশ্বে যা কিছু
মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ অর্থাৎ সব কল্যাণকর
বিষয়ে যতটুকু পুরুষের অবদান, ঠিক ততটুকুই নারীর। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি অবদান
নারীর। কিন্তু তারপরও সমাজে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়া হয় না।
নবী করিম (সা.) স্বয়ং নারীদের শিক্ষা গ্রহণের
গুরুত্বের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময় নারীদের উদ্দেশে
শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান
নরনারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)।
মোটকথা পুরুষ এবং নারী একই ঝরনার দুটি
তরঙ্গ মাত্র। মানুষ হিসেবে দুয়ের ভেতর বিশেষ পার্থক্য করা বাস্তবভিত্তিক নয়, বরং কল্পনাপ্রসূত।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক
পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা
একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন,
যে অধিক সাবধানী।’ (আন নিসা : ১৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘হে মানব সম্প্রদায়!
তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর; যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি
তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন। আর যিনি দু’জন থেকে নারী-পুরুষ
বিস্তার করেন।’ (আন নিসা : ১)।