গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের
১১২তম দিন চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবের কারণে আন্তর্জাতিক আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে
গাজায় গণহত্যার অভিযোগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির আবেদনের পর গাজায় জরুরি পদক্ষেপ
নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল
কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এ রায় ঘোষণা করবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে
এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আদালতের এ রায়ের সিদ্ধান্তে আসার জন্য দুই সপ্তাহ আগে উভয়পক্ষের শুনানি করেছে। যেখানে ইসরায়েল এ অভিযোগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলর বিরুদ্ধে আদালতের এ রায় যদিও বাস্তবিকভাবে প্রয়োগযোগ্য হবে না, তবে এ রায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন>> জার্মানিতে বন্দুক হামলা, শিশুসহ নিহত ৩
প্রতিবদেনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা
আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ৯টি আরজি জানিয়েছে। গাজায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধের
পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ স্বাভাবিক রাখতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়ারও
অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন,
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেডি পান্ডর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আইসিজেতে
আজ উপস্থিত থাকবেন। ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে কি না, সে প্রশ্নের সুরাহা আজ করবেন
না আইসিজে। শুধু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।
ইসরায়েল প্রায়ই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল
ও জাতিসংঘের তদন্ত বর্জন করে থাকে। তাদের দাবি, এগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। তবে চলতি মাসের
শুরুতে আইসিজেতে অনুষ্ঠিত দুদিনের শুনানিতে দেশটি একটি উচ্চপর্যায়ের আইনি দল পাঠিয়েছিল।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে
মামলাটি করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুদিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার
পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান
বন্ধের নির্দেশ দেন। জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষা
নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ ঘোষণা করা জরুরি বলেও উল্লেখ করা
হয়।
মামলার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যামূলক। কারণ এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনি জাতি, ও গোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ধ্বংস।
আইসিজেকে বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত। এটি
জাতিসংঘের একটি দেওয়ানি আদালত। সদস্যভুক্ত এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বিরোধের বিচার
করে এই আদালত। তবে এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা। আইসিসি যুদ্ধাপরাধে
জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল— দুই দেশই দুই আদালতের রায় মেনে
চলতে বাধ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিওর হাইয়াত এক এক্সবার্তায় বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যে দাবি করেছে
তার বাস্তব ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এটি আদালতকে ঘৃণ্য ও অবমাননাকর উপায়ে শোষণের শামিল।
গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত
২৫ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।