ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত। গাজায় সামরিক তৎপরতা বন্ধের রায় জানিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) জানান, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাহিনী গাজায় আর গণহত্যা চালাবে না ও ‘কথিত’ গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় এই রায় দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হেগ ভিত্তিক জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানটি।
রায়ে ইসরায়েলকে গণহত্যা প্রতিরোধে সব ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে ও নিজেদের পক্ষে প্রমাণ সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে। এই আদেশে গাজায় ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন, আন্তর্জাতিক ম্যান্ডেট ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে সমস্ত প্রমাণের নির্ভরযোগ্যতা স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আদালতের অস্থায়ী ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে;
১. ইসরায়েলকে অবশ্যই গণহত্যামূলক বলে বিবেচিত হতে পারে এমন যেকোন কাজ প্রতিরোধ করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা, শারীরিক ক্ষতি ঘটানো, একটি গোষ্ঠীর ধ্বংস ঘটাতে পরিকল্পিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, জন্ম রোধ করা ইত্যাদি।
২. ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার সামরিক বাহিনী কোনো গণহত্যামূলক কাজ করবে না।
৩. ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যার জন্য উস্কানি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এমন কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য প্রতিরোধ ও শাস্তি দিতে হবে।
৪. মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ইসরাইলকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. ইসরায়েলকে অবশ্যই গণহত্যার মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে এমন প্রমাণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
৬. ইসরায়েলকে এই আদেশের এক মাসের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
এছাড়া, আদালত হামাসের হাতে জিম্মিদের ভাগ্য নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলে বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে (২০২৩) জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর চলতি মাসের শুরুর দিকে (১১ ও ১২ জানুয়ারি) আইসিজেতে দুই দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরাইলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের এই হামলায় হামাসশাসিত গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ২৬ হাজারের বেশি নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী।