তিন দিক থেকে
সৈন্য আর সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে রাশিয়া ঘিরে ফেলায় পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য যুদ্ধের যে
দামামা বাজছে, তা প্রশমনে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে
ইউক্রেন। ব্রিটেনে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভ্যাডিম প্রিসতাইকো বিবিসিকে দেওয়া
এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এড়াতে ন্যাটোতে যোগদান বাতিল করতে পারে
ইউক্রেন।
সীমান্তে রাশিয়ার
সৈন্য মোতায়েন এবং রণসজ্জার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পিছু হটার এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের
ছাড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে যে যুদ্ধের দামামা বাজছে আপাতত সেটি শান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক
জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঘিরে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা
চলছে। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হলে তা রাশিয়ার জন্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে জানিয়ে
ভ্লাদিমির পুতিন বলেছে, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান মানবে না মস্কো এবং এটি যুদ্ধ উসকে
দিতে পারে।
সামরিক জোটে ইউক্রেনের
যোগদান নিষিদ্ধ এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারে রাশিয়া দাবি জানালেও
পশ্চিমারা এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। সোমবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আটলান্টিক সামরিক জোটে যোগদানের লক্ষ্যের ব্যাপারে নমনীয় হতে ইচ্ছুক
ইউক্রেন।
ন্যাটোর সদস্যপদের
ব্যাপারে কিয়েভের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে কি-না, জানতে চাইলে ভ্যাডিম প্রিসতাইকো
বলেছেন, আমাদেরকে বিশেষভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে, যাতে আমরা পিছু
হটতে বাধ্য হই।
ন্যাটোর সদস্য
নয় ইউক্রেন, কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে এই জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে এবং
এর ফলে দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদি এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়, তাহলে
যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা এই সামরিক জোটকে রুশ সীমান্তে নিয়ে আসবে।
পুতিন বলেছেন,
জোটের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ইউক্রেনকে রাশিয়া লক্ষ্য করে ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র
উৎক্ষেপণের ক্ষেত্র বানাতে পারে। তিনি বলেন, এটি ঠেকানোর জন্য রাশিয়ার ‘শেষ সীমা’ টেনে দেওয়া দরকার।
গত কয়েক সপ্তাহ
ধরে তীব্র উত্তেজনার মাঝে ইউক্রেনের তিন দিকে এক লাখের বেশি সৈন্য এবং ভারি অস্ত্র
মোতায়েন করেছে রাশিয়া। বর্তমানে ইউক্রেন সীমান্তের একেবারে স্ট্রাইকিং দূরত্বে অবস্থান
নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ন্যাটো মিত্ররা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে,
যেকোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা শুরু করতে পারে রাশিয়া।
তবে মস্কো বারবার
হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেছে, তারা সামরিক কৌশলের মহড়া চালাচ্ছে। একই সঙ্গে
লিখিত এক বিবৃতিতে ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে
দিয়েছে রাশিয়া। যদিও ন্যাটোর সদস্যরা রাশিয়ার এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
রোববার ইউক্রেনের
প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এই সংকটের অবসানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে তারা একমত হয়েছেন বলে হোয়াইট হাউসের
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।