শরীয়তপুরে জমির ফসল বাঁচাতে গম ও ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেশি-বিদেশি অতিথি পাখিসহ দুই শতাধিক পাখি নিধন করেছেন এক সাবেক ইউপি সদস্য। এমনকি পাখি নিধন করে তা জমির চারপাশে সুতা দিয়ে বেঁধেও রেখেছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নের মধ্য সিড্যা গ্রামের খনারপাড় নামক ফসলি জমির মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পাখি মেরে ফেলা শাহজাহান মাদবর সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ঘুঘু, শালিক, বক, চড়ুইসহ বিদেশি অতিথি পাখি খাবারের সন্ধানে মধ্য সিড্যা গ্রামের খনারপাড় নামক ফসলি জমির মাঠে আসে। দেশি-বিদেশি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে পুরো ফসলি মাঠ। কয়েক দিন ধরে শাহজাহান মাদবর এবং তার লোকজন গম ও ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ছিটিয়ে রাখতেন। বিষ খেয়ে পাখি মারা গেলে কৃষকরা তা মাটিতে পুঁতে ফেলত। এ ছাড়া জীবন্ত পাখিদের ভয় দেখাতে তারা বিষে মারা যাওয়া কিছু পাখি জমির চারপাশে সুতা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা জানান, শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে অতিথি পাখি আসে। কিছু অসাধু ব্যক্তি, যারা প্রকৃতির শত্রু তারা বিষসহ নানা মাধ্যমে পাখিগুলো মেরে ফেলছে; যা খুবই দুঃখজনক। এসব পাখি নিধনকারীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
এ বিষয়ে পাখি নিধনকারী শাহজাহান মাদবর বলেন, ‘মরা পাখিগুলোর ছবি তুলতে হবে কেন? আমি তো পাখির জন্য গম বপন করিনি। আর এগুলো গণমাধ্যমে দেওয়ার দরকার নেই।’
শাহজাহান মাদবরের পুত্রবধূ হিমু আক্তার বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে বীজ দিয়েছিল, সেই বীজ জমিতে বপন করেছে আমার শ্বশুর। জমিতে তিনি ইঁদুর মারার বিষ দিয়েছিলেন, তাতে যে এমন ঘটনা ঘটবে তা আমাদের জানা ছিল না।’
সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল হাদী জিলু বলেন, পাখি মারার বিষয়টি আমি শুনেছি। সাবেক মেম্বার শাহজাহান মাদবর আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, তার ফসলি জমিতে তিনি গমের বীজ বপন করেছেন। কে বা কারা বিষ মিশিয়ে পাখি মেরেছে, তা তিনি জানেন না। তবে বিষ দিয়েই হোক আর যেভাবেই হোক পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। পাখি হত্যা অন্যায় এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে শুক্রবার বিকালে শাহজাহান মাদবরকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন, বন্য প্রাণী হত্যা আইনে সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ২ হাজার টাকা জরিমানা। এ ছাড়া কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও শাহজাহান মাদবরের বয়স বিবেচনা ও ফের পাখি হত্যা করবে না মর্মে মুচলেকা দেওয়ায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। পাখিসহ যেকোনো বন্য প্রাণী হত্যা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।