প্রায় সাত বছর পর আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমাবর্তন। প্রতিষ্ঠার পর এটি বিশ্ববিদ্যালয়টির ষষ্ঠ সমাবর্তন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠেয় এই সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হতে শুরু করেছে ক্যাম্পাস। লাইনে দাঁড়িয়ে কালো গাউন আর ক্যাপ সংগ্রহ করতে দেরি হলেও, সেটি পরতে দেরি করছেন না শিক্ষার্থীরা। ফলে হল কিংবা বিভাগ, টিএসসি কিংবা মাঠ, হোটেল কিংবা ডাইনিং-ক্যান্টিন বা চায়ের দোকান সব জায়গাতেই দেখা মিলছে কালো গাউন পরা শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে, ট্রান্সপোর্ট, মেডিক্যাল সংলগ্ন চায়ের দোকানগুলোতে গাউন পরেই আড্ডা দিচ্ছেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা দলে দলে ভিড় করছেন খাবার হোটেলগুলোতেও। আবার অনেকেই এই গাউন আর ক্যাপ পরেই দল বেঁধে ঘুরছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে। কেউ আবার দল বেঁধে গাউন পরেই ঝাপ দিচ্ছেন পুকুরে। আবার কেউ বন্ধু সমেত গড়াগড়ি খাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর। তাদের আনন্দ যেন শেষই হয় না। আনন্দ-আড্ডায় ব্যস্তদের অধিকাংশই বেশ কয়েক বছর আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। সমাবর্তনের উদ্দেশ্যে এসেছেন আবার। তাই যেখানেই যাচ্ছেন আনন্দ-আড্ডায় মেতে উঠছেন সবার সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করছেন তাদের ক্যাম্পাস জীবনের সোনালি অতীত।
অনেক শিক্ষার্থী আবার তাদের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলোতে একা কিংবা বন্ধু-বান্ধবীসহ গিয়ে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করছেন। হয়তো এভাবে সবাই মিলে এটিই শেষবারের মতো ফ্রেমবন্দি হওয়া। আবার কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন মা-বাবাকে। তাদের হাত দিয়েই পরছেন সমাবর্তনের গাউন ও ক্যাপ। এছাড়া অনেকেই এই সুযোগে মা-বাবাকে ঘুরে দেখাচ্ছেন তাদের স্মৃতিবিজড়িত ক্যাম্পাস।
এবারের সমাবর্তনে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাচ হিসেবে অংশগ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ ব্যাচের (২০১৬-১৭ সেশন) শিক্ষার্থীরা। এই ব্যাচেরই জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী নুর হাছান নাঈম তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘সদ্য স্নাতক শেষ করে এতো দ্রুত সমাবর্তন পাওয়া আমার জন্য সত্যিই অনেক আনন্দের। সাবেক হলে এতক্ষণে আমরা হয়তো একেক জন একেক জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতাম। কিন্তু ক্যাম্পাসে এখনও অবস্থান করায় আমরা বন্ধু-বান্ধবদের সহজেই সামনে পাচ্ছি। একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির পাশাপাশি স্মৃতিগুলোকেও ফ্রেমবন্দি করে রাখছি। তাই আমাদের আনন্দ একটু বেশি।’
সমাবর্তন প্রত্যাশীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন করে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। পাঁচ-সাত বছর পর সমাবর্তন আয়োজন না করে প্রতি দুই বছর পর পর সমাবর্তনের আয়োজনের দাবি জানান তারা।
সামবর্তন কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সমাবর্তন রেজিস্ট্রেশন কমিটির তথ্যমতে, এবার ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্রাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন, এমফিল- ডিগ্রির ৩৪ জন ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন রয়েছেন। এবারের সমাবর্তনে গ্রাজুয়েটদের মধ্য থেকে দুই ক্যাটাগরিতে ১৬ জন শিক্ষার্থী পাচ্ছেন স্বর্ণপদক সম্মাননা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শিক্ষার্থীদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেবেন।
এদিকে, সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার পাশাপাশি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কাজ করছে। যেহেতু এটি একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান তাই একটু বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। নিরাপত্তার নিশ্চিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্যান্ডেলের দায়িত্ব এসএসএফ নিয়ে নিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও ঘাটতি নেই। আশা করছি কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সফলতার সাথে আমরা এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি শেষ করতে পারবো।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সমাবর্তনের আয়োজন করবো। আশা করছি সেই প্রতিশ্রুতি আগামি ২৫ তারিখ বাস্তবায়ন হবে। আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বিভিন্ন উপ-কমিটিকে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছি। এখন একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাবর্তন আয়োজনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’