জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর ইউনিয়নের কাজী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো: মুনির মাঝীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম(৪৫)। কৃষক স্বামীর সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে সহ পাঁচজনের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো তাকে। তবে এসডিএস এর সহযোগিতায় মাছ চাষ করে বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।
শাহনাজ বেগম ২০১৯ সালে তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এসডিএস এর বিকে নগর ইউনিয়নের পদ্মা সমিতির একজন সাধারণ সদস্য হন। সদস্য হওয়ার পরে প্রথম এসডিএস থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তাদের নিজস্ব এক ফসলী একটি নিচু জমিতে স্বামী মো: মুনির মাঝীর সহায়তায় ৫০ শতক জায়গার একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন।
সে সময় পুকুরে কোম্পানীর তৈরী পিলেট খাদ্য এবং হাতে বানানো খাদ্য দিয়ে মাছচাষ করতেন তারা। যার ফলে খাদ্য খরচ বেশী হওয়ায় প্রথম পর্যায়ে সন্তোষজনক লাভ হয়নি তাদের। এরই মধ্যে শাহনাজ বেগম সমিতির মিটিংয়ে মাঠকর্মীর থেকে জানতে পারেন যে, এসডিএস থেকেই প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মাছ চাষে সহায়তা করা হয়। জানার পরে তিনি আবেদন করেন প্রশিক্ষণের জন্য।
সম্ভ্যাবতা যাচাই শেষে এসডিএস এর বাস্তবায়নে এবং পিকেএসএফ এর অর্থায়নে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাত থেকে দুই দিন মেয়াদী মাছ চাষে দক্ষতা উন্নয়ন মূলক প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এছাড়া এসডিএস এর পক্ষ থেকে মাছ চাষের সহায়ক উপকরণ হিসেবে চিতলসহ বিভিন্ন কার্প মাছের পোনা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় শাহনাজ বেগমকে।
সবশেষে গত বছর এসডিএস থেকে ৫ লক্ষ টাকার লোন নিয়ে ২ একরের একটি পুকুর প্রস্তুত করে পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পারে পেপে ও কলাসহ করেছেন নানা জাতের সবজির চাষ। এসডিএস এর সরাসরি তত্বাবধানে মাছের নিয়মিত পরিচর্যা ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রয়োগের ফলে বেশ ভালো ফলাফলও পেয়েছেন তিনি।
এসময় তিনি চাহিদা ও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে চিতল জাতীয় উচ্চ মূল্যের মাছের সাথে করেছেন কার্প জাতের মাছের চাষ। ২ একরের পুকুরটিতে ৪ শত চিতল, ১ শত আইড় এবং ৬ হাজার কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়েন শাহনাজ বেগম। এসময় পুকুরে অন্যান্য খাবার নিয়মিত প্রয়োগের পাশাপাশি চিতল ও আইড় মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে তেলাপিয়া ও কার্প মাছের ধানী পোনা ব্যবহার করা হয়।
এসডিএস এর হিসেব মতে গত এক বছরে শাহনাজ বেগম তার পুকুর এবং পাড়ে মাছ ও সবজি চাষে ৮ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় সারে ১২ লক্ষ টাকার সবজি এবং ফসল বিক্রি করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে। যেখানে ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৩০ হাজার টাকার সবজি উৎপাদন করেছেন এবং ৮ লক্ষ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাছ উৎপাদন করেছেন প্রায় ১২ লক্ষ ৫ হাজার টাকার।
বর্তমানে এসবের পাশাপাশি নিজস্ব মেশিনে তৈরী মাছের খাদ্যও বিক্রি করছেন তারা। ইতিমধ্যেই বাড়িতে একটি পাকা ঘর নির্মান করেছেন শাহনাজ বেগম। তাছাড়া এক মেয়েকে বানিয়েছেন ডাক্তার। ইতিমধ্যেই এলাকায় শাহনাজ বেগম এবং তার স্বামী সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। স্থানীয় ক্রেতাদের অনেকেই শাহনাজ বেগমের বাড়িতে আসেন মাছ কিনতে এবং তার পুকুর দেখতে। তাদের দেখে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকেই এখন উচ্চ মূল্যের মাছ চাষ শুরু করেছেন।
স্থানীয় রুবেল আহমেদ বলেন, আমাদের এলাকার শাহনাজ বেগম ও তার স্বামী মো: মুনির মাঝী এসডিএস এর সহায়তায় মাছ চাষ করে অনেক সফলতা পেয়েছেন। মাছ চাষ করে অল্পদিনের মধ্যেই তাদের সংসারের চিত্র পালটে গিয়েছে। তার দেখাদেখি আমিও এসডিএস এর সহযোগিতায় মাছচাষ শুরু করেছি। আশা করি ভালো কিছু করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
এসডিএস এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সফল উদ্যোক্তা শাহনাজ বেগম জানান- এক সময় ৫ জনের সংসারে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচতো দূরে থাক, সংসার চালানোই অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো আমার জন্য। কিন্তু এসডিএস এর সহযোগিতায় মাছ চাষ শুরু করার পর ধীরে-ধীরে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। বর্তমানে আমরা অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার এক মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছি।
এসডিএস এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের সাথে উচ্চ মূল্যের চিতল, আইড়, শোল মাছ চাষ করলে বাজার মূল্য বেশী পাওয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে থাকে বিধায় আমরা শাহনাজ বেগমকে এভাবে মাছ চাষের পরামর্শ প্রদান করি। তাছাড়া উচ্চ মূল্যের মাছের জীবন্ত খাবার হিসেবে তেলাপিয়া, মলা, বিভিন্ন প্রজাতির ধানী পোনা প্রয়োগের ফলে সম্পূরক খাদ্য খরচও কম লাগে। যার ফলে শাহনাজ বেগম ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। আমরা আশা করছি আরও অনেকেই এভাবে চাষাবাদে আগ্রহী হবে।