জালিয়াতির মাধ্যমে
৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নগরীর আন্দরকিল্লার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট
জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফোরকানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি
দমন কমিশন (দুদক)। মোহাম্মদ ফোরকান চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুঁইছড়ি গ্রামের মৃত মাস্টার
মাহমুদুর রহমানের ছেলে।
এতে অন্য তিন
আসামি হলেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মিরপুরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মুন্সী ফররুখ হোসাইন মিন্টু, তার ভাই মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন ও
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক স্টাফ রংপুরের বাসিন্দা মুকিত মন্ডল। গত রোববার দুদক সমন্বিত জেলা
কার্যালয়-১ এর সহকারি পরিচালক এনামুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন,
জালিয়াতির মাধ্যমে মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ টাকা বিল ছাড় করানোর চেষ্টার অভিযোগে মামলাটি
দায়ের হয়। আসামিরা দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারা অনুযায়ী
শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলা তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।
মামলায় দন্ডবিধির
৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯/৫১১ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা
হয়।
মামলার এজহারে
বলা হয়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জন্য এমআরআই ইক্যুইপমেন্ট
(আইসিউ ভেন্টিলেটর, আইসিউ বেড ও কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর উইথ আইভিপি এবং ক্যাপনোগ্রাফি)
ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে
মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ নির্বাচিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটিকে
২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এতে ৮টি আইসিইউ
ভেন্টিলেটর, ৮টি আইসিইউ বেড এবং ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর বাবদ মোট ৫ কোটি ৩৭ লাখ
টাকার মালামাল সরবরাহ করে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে যন্ত্রপাতির ত্রুটি থাকায় হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ সেগুলো গ্রহণ করেনি।
এজাহারে বলা
হয়, মালামাল সামগ্রীর ত্রুটি ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার অনিয়ম নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর
দুদক একটি মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট
দাখিল করা হয়। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতিসমূহ হাসপাতালে
রেখে চলে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিলের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করলেও ব্যয় মঞ্জুরী
প্রদান করা হয়নি। ব্যয় মঞ্জুরীপত্র প্রদান না করায় জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক
ডা. শেখ ফজলে রাব্বি ব্যয় মঞ্জুরীপত্র চেয়ে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় বরাবর
চিঠি দেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যয় মঞ্জুরীপত্র প্রদান করা হয়নি।
একই বছরের ২৬
জুন মুন্সি ফররুখের ভাই মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বর থেকে স্বাস্থ্য
ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিফ একাউন্টস
এন্ড ফিন্যান্স অফিসার, সেগুনবাগিচা বরাবর প্রেরিত একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র চট্টগ্রাম
জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফোরকানের মোবাইল
নম্বরে পাঠান।
এতে ভুয়া জালিয়াতির
মাধ্যমে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বির মোবাইলে ফরোয়ার্ড করে দেন। ২০২২
সালের ২৮ জুন আহমেদ এন্টারপ্রাইজের অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল জেনারেল হাসপাতালে আসেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুন্সী ফররুখ, তার ভাই সাজ্জাদ, অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফোরকান পরস্পর যোগসাজশে
ভুয়া জালিয়াতির মাধ্যমে ডা. শেখ ফজলে রাব্বির একক স্বাক্ষরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার
টাকার একটি বিল প্রস্তুত করেন।
বিলটি পাশ করার
জন্য একই দিনে চট্টগ্রামের বিভাগী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস বরাবর পাঠানো হয়। বিলটি
অনুস্বাক্ষর (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর বিহীন) বিহীন ছিল। তবে বিলের অফিস কপি
ও বিল রেজিস্ট্রারে তার স্বাক্ষর রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয়
হিসাবরক্ষণ অফিস সেই বিলটি যাচাই-বাছাইকালে অর্থ বরাদ্দ পত্রের পৃষ্ঠাঙ্কন না থাকা,
পত্রটি চট্টগ্রামের হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর না হয়ে হিসাবরক্ষণ অফিস, সেগুনবাগিচা বরাবর
হওয়াসহ সার্বিক পর্যালোচনায় জিও ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং বিলটি বাতিলপূর্বক
ফেরত পাঠানো হয়। এতে উক্ত চেক উত্তোলন করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।