আগামী দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) দলীয় প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র
সংগ্রহ করেছেন একই পরিবারের বাবা ছেলে ও দুই ভাইসহ ১৫ জন প্রার্থী। গত তিন দিনে এ ১৫
জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন পত্র পূরণ করে দাখিল
প্রক্রিয়া শেষ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা
গেছে দু-চারজন ছাড়া রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকলেও সংসদ নির্বাচন এলে অনেকে গা ঝাড়া
দিয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী বলে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় জানান দেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নের
ক্ষেত্রে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে অনেকেই মতপ্রকাশ করেন। তবে, এ বিষয়ে তৃণমূল
আওয়ামী লীগের অনেক সাধারণ নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাবেক
সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার এর কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে যায়। দলীয় কোন্দল, অপপ্রচার,
একাধীক প্রার্থী হওয়া ও জোটবদ্ধ নির্বাচনের জন্য এ আসনটি দু'দফায় জাতীয় পার্টির কব্জায়
চলে যায়। ফলে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা বিভাগীয়
অতিরিক্ত মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা সংসদ সদস্য
হন। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি আশাবাদী মহাজোটর প্রার্থী হয়ে তিনিই সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হবেন। সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করার জন্য জনগণ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত
করবেন। তবে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। মতবিরোধ ও বিভাজন থাকলেও জোরালো ভাবেই এ আসনে
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চাচ্ছেন তৃণমূল অনেক নেতাকর্মী।
এদিকে আগামী
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থী হতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে আওয়ামী
লীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, তার ছেলে নগদের নির্বাহী
পরিচালক মারুফুল ইসলাম ঝলক, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
ডা: আবু জাফর চৌধুরী বীরু, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক
মাহফুজুর রহমান কালাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট
হোসেনে আরা বাবলী, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু ও তার আপন
বড় ভাই কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা
দীপক কুমার বণিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এএইচ এম মাসুদ দুলাল, মোবারক হোসেন স্মৃতি সংসদের
চেয়ারম্যান এরফান হোসেন দিপ, তার চাচা মনির হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা লিপি পেপার মিলের
মালিক শিল্পপতি মতিন খাঁন, শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ কর্মী আনোয়ার হোসেন।
এদিকে সংসদীয়
এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, নির্বাচন এলেই সোনারগাঁ আসনে আওয়ামী লীগের
প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে দু-চারজন ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়
না। জনগণেরও কোনো খোঁজ খবর নেন না। অনেককে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন কর্মসূচিতেও দেখা
যায়না। তারাও দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। নতুন করে আরও অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
করতে পারেন। এ আসনে ১৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র সংগ্রহে দলীয় কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে
বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন। অনেকের ধারণা, ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র
সংগ্রহ করায় আবারও হয়তো এ আসন হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। আসনটি ধরে রাখতে ঐক্যের বিকল্প
নেই বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ
নেতা ও বারদী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩
আসনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাদের অনেকেরই সাংগঠনিক দক্ষতার অভাব রয়েছে।
অনেকেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। কারো কারো জন সমর্থন নেই। নিজের যোগ্যতা
নিজে বুঝতে না পারলে মনোনয়ন কিনে লাভ কি?
সোনারগাঁ উপজেলা
আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর
রহমান মাসুম বলেন, যোগ্য প্রার্থী মনে করে অনেকেই মনোনয়নপত্র কিনেছেন। সবাই তো মনোনয়ন
পাবেন না। আশা করি যোগ্য ব্যক্তিই মনোনয়ন পাবেন। এবারও আমরা নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন চাইছি।
যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো।
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক একাধীক ব্যক্তি জানান, নির্বাচনের সময় এলেই এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশির
সংখ্যা বেড়ে যায়। একারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলিয় মনোনয়ন হারায়। গত নির্বাচনেও
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১৫ জনে গিয়ে দাড়িয়েছিল। এ কারণে তৃণমূল আওয়ামী
লীগের অনেক নেতাকর্মীর মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।