অবৈধ আমদানি অথবা চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানিকৃত স্বর্ণবারসহ স্বর্ণালংকার আটকের ঘটনা প্রায় দেখা যায়; যা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। রাষ্ট্রের যেই সংস্থা আটক করুক না কেন, এসব স্বর্ণের শেষ গন্তব্য হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রাম এলাকায় আটককৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে অস্থায়ীভাবে জমা দেয়া হলেও তা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় জমা দেয়া হয়নি। এবার এসব স্বর্ণ স্থায়ীভাবে ঢাকার জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
সূত্রে জানা যায়, কাস্টম ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক আটককৃত এবং রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকৃত স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় জমা দান এবং বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হওয়ায় এ কার্যক্রমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সহায়তা ও পরিবহন কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালকে অনুরোধ করার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রাম এলাকায় আটককৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে অস্থায়ীভাবে জমা দেয়া হলেও তা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় জমা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে অস্থায়ীভাবে জমাকৃত স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার ১৮টি লট/জিআর ভুক্ত এক হাজার ৭৭৩ পিস স্বর্ণবার প্রতিটি ১০ তোলা হিসেবে ১৭ হাজার ৭৩০ তোলা বা ২০৬ কেজি ৮০ গ্রাম এবং ৮০ গ্রাম স্বর্ণালংকারের (চেইন ১৮টি ও কানের দুল আট জোড়া) ইনভেন্ট্রি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ইতোমধ্যে শেষ করেছে। ইনভেন্ট্রিকৃত এসব স্বর্ণের আনুমানিক বাজার মূল্য ১১৫ কোটি টাকা। এসব অস্থায়ীভাবে জমাদানকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থায়ীভাবে জমাদান করলে তা সরকারের রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে চিঠিতে কমিশনার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর অথবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গ্রুপ ৮-বি ও কাস্টোডিয়ান শাখার দায়িত্বে থাকা এবং উক্ত কাজের সমন্বয়কারী এন্ট্রি মানি লন্ডারিং বিশেষজ্ঞ উপ-কমিশনার নূর-উদ্দিন মিলন বলেন, চট্টগ্রাম এলাকায় যেসব স্বর্ণ জব্দ বা উদ্ধার করা হয়, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে জমা দেয়া হয়। আমাদের ধরণা ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনো শাখায় জমা দিলেই হয়। যার রাষ্ট্রের অনুকূলে চলে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম শুধু কাস্টোডিয়ান মাত্র, তারা এ স্বর্ণ কোনো কাজে লাগাতে পারবে না। ফলে শতকোটি টাকা অধিক মূল্যে এসব স্বর্ণ রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসছে না।
এদিকে দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার কাস্টম কর্তৃক আটককৃত স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার পড়ে আছে। তাই এ স্বর্ণগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় জমা দেয়ার সিদ্ধন্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ও একই দিনে জমাদানের বিধান রয়েছে। তাই উক্ত কাজে র্যাব ও র্যাবের হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণগুলো নিলাম করে সরকারের রাজস্ব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিস্যা বুঝিয়ে দেবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, স্বর্ণগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামে পড়ে থাকায় রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা শাখায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম শাখার শুধু ২০৬ কেজি নয়, আর অধিক পরিমাণ স্বর্ণ জমা রয়েছে। মামলা ও আইনি জটিলতা থাকায় সেগুলোর কোনো কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। যে স্বর্ণগুলোর কোনো প্রকার আইনি জটিলতা নেই, শুধু সেই স্বর্ণগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব খাতে ১১৫ কোটি টাকা যোগ হবে।