এক অস্ত্রোপচার করেই সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন জন ব্রিঙ্কলে নামে এক হাতুড়ে চিকিৎসক। তার সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে সেই সময়।
অবশ্য ব্রিঙ্কলের
কাণ্ডটাও ছিল তেমন সাড়া ফেলে দেওয়ার। জীবন্ত ছাগলের অণ্ডকোষ কেটে এনে মানুষের শরীরে
প্রতিস্থাপন করেছিলেন এই চিকিৎসক।
ওই অস্ত্রোপচারের
পর সারা বিশ্বে তাকে ‘গোট গ্ল্যান্ড ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।
ঘটনাটি ১৯৩০ সালের।
যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস স্টেট মেডিকেল বোর্ডের এক দল বিশেষজ্ঞের সামনে কানসাসের মিলফোর্ডে
অস্ত্রোপচারটি করেন জন ব্রিঙ্কল।
মিলফোর্ডে জীবন্ত
ছাগলের নিম্নাংশ অসাড় করে এটির দুটি অণ্ডকোষ কেটে বার করে আনলেন ব্রিঙ্কল। এর পর পাশের
টেবিলে শুয়ে থাকা বিল স্টিটসওয়ার্থ নামে এক ব্যক্তির শরীরে খুব সন্তর্পণে অণ্ডকোষ দুটি
প্রতিস্থাপন করলেন।
রাতারাতি খ্যাতি
লাভ করেন ব্রিঙ্কল। কারণ তার সেই অস্ত্রোপচার প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি
ফেরেন ছাগলের অণ্ডকোষ লাগানো বিল নামের সেই ব্যক্তি।
ঝড়ের গতিতে ব্রিঙ্কলের
এই অস্ত্রোপচারের কাহিনি। প্রচারিত হয় ছাগলের অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপন করলে পুরুষের যৌন
সক্ষমতা বাড়ে।
ব্রিঙ্কলের ক্লিনিকের
বাইরে রোগীদের লাইন পড়ে যেতে শুরু করে। প্রচুর উপার্জন করেন তিনি।
কিন্তু এর পর
দুর্ভোগ নেমে আসে ব্রিঙ্কলের কাছে এসে অস্ত্রোপচার করা সেসব রোগীর। অনেকে অসুস্থ হয়ে
চিরকালের জন্য অকেজো হয়ে পড়েন। অনেকের সংক্রমণ এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে যে, তারা একে একে
মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
ফলে ১৯৩০ সালে
চিকিৎসক ব্রিঙ্কলের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় স্থানীয় সরকার।
তবে তার আগেই
কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উপার্জন করে ধনবান হয়ে যান ব্রিঙ্কল। অবশ্য এসব উপার্জনের বড় একটি
অংশ শহরের উন্নয়নে ব্যয় করেন এই হাতুড়ে চিকিৎসক।
সেখানেও তার একটি
উদ্দেশ্য ছিল। তা ছিল রাজনীতির মাঠে সফল হওয়ার। মিলফোর্ড শহরে একটি ডাকঘর, একটি ব্যাংক,
রাস্তায় বৈদ্যুতিক আলোর সংযোগ লাগিয়েছিলেন ব্রিঙ্কল। দিয়েছিলেন রেডিও স্টেশন। একটি
চিড়িয়াখানা খোলার চেষ্টাও করেছিলেন।
অদ্ভুদ চরিত্রের
এই হাতুড়ে চিকিৎসক জন ব্রিঙ্কল মূলত ছিলেন বড় ধরনের এক প্রতারক। সে জন্য একবার গ্রেফতারও
হয়েছিলেন।
উত্তর ক্যারোলিনাতে
জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তির বাবাও ছিলেন একজন হাতুড়ে চিকিৎসক। বাবার মতো চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন
ব্রিঙ্কল। বাবার ওষুধের বই পড়ে চিকিৎসা নিয়ে বেশ কিছু জ্ঞানার্জন করেছিলেন। তার পর
গাড়িতে করে অলিগলিতে ওষুধ বেচার একটি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯০৮ সালে স্ত্রীকে
নিয়ে শিকাগোয় চলে যান ব্রিঙ্কল। সেখানে বেনেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই মানব
শরীর সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন ব্রিঙ্কল। কলেজের বেতন-ফিস না দেওয়ায় তাকে কলেজ থেকে বের
করে দেওয়া হয়। যে কারণে চিকিৎসক হওয়ার কোনো সার্টিফিকেট ছিল না তার। তবে তিনি ভুয়া
সার্টিফিকেট জোগাড় করে ক্লিনিক খোলেন।
এরই মধ্যে গ্রিনভিলে
গিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। যৌনশক্তি বর্ধক তেল বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন। কয়েক মাস
পর তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। ব্যবসা গুটিয়ে সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে
গ্রেফতারও হন।
১৯১৭ সালে কানসাসে
১৬ রুমের একটি বড় ক্লিনিক খুলে ফের প্রতারণার জাল ফেলেন ব্রিঙ্কল। ভুয়া সার্টিফিকেট
দেখিয়ে স্থানীয়দের সবরকম রোগেরই চিকিৎসা করতেন এই ক্লিনিকে। পরবর্তীকালে নিজেকে বড়মাপের
সার্জন হিসাবে প্রচার করেন।
তার ওই ক্লিনেকেই
এসেছিলেন বিল স্টিটসওয়ার্থ নামের এক ব্যক্তি। নিজের যৌন দুর্বলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন
বিল। সেই সময় বিলকে প্রতারণার জালে ফেলে তার শরীরে ছাগলের অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপনের জন্য
রাজি করান ব্রিঙ্কল।