ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
পুকুরে পড়ে ১৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় ইউপি ভবনের সামনে
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় ৩৫ জনকে উদ্ধার করে
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাশার স্মৃতি পরিবহন নামের বাসটি প্রায় ৬০-৭০
জন যাত্রী নিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি
গাড়ির ছাদেও যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছেন আহত যাত্রীরা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঝালকাঠি থানা
পুলিশ ও দমকল বাহিনীর ১০ টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ
শুরু করে।
উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের
৩ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৬ টায়
নিহত ১৭ জনের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট তাদের লাশ হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। অ্যাম্বুলেন্সে
করে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম
জহিরুল ইসলাম। এ ঘটনায় জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মামুন
শিবলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য’র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতের
পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পুকুরে, নিহত ১৭
নিহতরা হলেন, ভান্ডারিয়ার সালাম মোল্লার
ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পান্না মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৪৫), মুজাফফর আলীর ছেলে সালাম
মোল্লা (৬০), নিজামিয়া গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), নজরুল
ইসলামের মেয়ে খুশবো আক্তার (১৭), ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারিবুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের
মেয়ে সুমাইয়া (৬), বরিশালের বাখেরগঞ্জ উপজেলার চর বোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের
ছেলে আবদুল্লাহ (৮), ভান্ডারিয়ার রিজার্ভ পুকুর পাড় এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা
বেগম (৬০), লাল মিয়া হাওলাদার ছেলে আবুল কালাম
হাওলাদার, মেহেদীগঞ্জ সদরের মো. রিপনের মেয়ে রিপামনি (২) তার স্ত্রী আইরিন আক্তার
(২২), রাজাপুরের বলাইবাড়ি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), ভান্ডারিয়ার উত্তর
শিয়ালকাঠি গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), কাঠালিয়ার বাশবুনিয়া গ্রামের তৈয়বুর রহমানের মেয়ে
সালমা আক্তার মিতা (৪২), কাঠালিয়ার ফারুক হোসেন (৫৫) ভান্ডারিয়ার সাদিয়া বেগম ( ২২)
ও বরিশালের পারভীন (৬২)। শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে পরিচয় সনাক্ত হওয়া লাশ স্বজনদের
কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত
যাদের নাম জানা গেছে তাঁরা হলেন, আবুল বাশার (কাঠালিয়া), রাসেল মোল্লা (ভান্ডারিয়া),
ফাতিমা (ভান্ডারিয়া), রাসেল (ভান্ডারিয়া), মিফতা (নলছিটি), রিজিয়া (কাঠালিয়া), আরজু
(কাঠালিয়া), মনোয়ারা (রাজাপুর), সুইটি (ভোলা), রুকাইয়া (বাউফল), আজিজুল (নলছিটি), আলাউদ্দিন
(রাজাপুর), সোহেল (রাজাপুর), আবুল কালাম (রাজাপুর), আকাশ (বরগুনা), সোহাগ (সাতক্ষীরা),
নাঈমুল (মঠবাড়িয়া), সিদ্দিকিুর (বাউফল), মনিরুজ্জামান (ভান্ডারিয়া), আল-আমিন (ঝালকাঠি),
সাব্বির (বরিশাল)।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, সকাল
৯ টার দিকে ভান্ডারিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের দিকে যাচ্ছিলো বাসটি। পথিমধ্যে সদর
উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় পৌঁছালে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইউপি ভবনের সামনের মোড় ঘুরতেই
একটি যাত্রবাহী একটি ইজি বাইককে সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার পার্শ্বে একটি ডোবায় পড়ে যায়।
দেরি করে বাস ছাড়ার কারণে তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে বলে সময় কম থাকার কারনে
দ্রুত গতিতে চালানোর জন্য বাসটি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পুকুরে, নিহত ১৩
স্থানীয়রা দৌড়াদৌড়ি করে উদ্ধারের চেষ্টা
চালায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু
করে। এসময় ৩৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও এরমধ্যে ১৭জন যাত্রী মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের
মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ ও নারীর সংখ্যাই বেশি।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন এইচ এম জহুরুল ইসলাম,
বলেন, নিহতদের লাশ তাদের স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হচ্ছে। ১৭ জনের মধ্যে ১৭টি লাশ
ইতোমধ্যেই তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে। আহতরা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিতিৎসা নিচ্ছেন।