আজঃ শনিবার ০৪ মে ২০২৪
শিরোনাম
কেরানীগঞ্জে মাটিদস্যুতা

ঝুঁকিতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইন

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জানুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ০৯ জানুয়ারী ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

ঝুঁকিতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইন বুড়িগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষা কেরানীগঞ্জের কোণ্ডা ইউনিয়নে প্রধান সমস্যা মাটিদস্যুতা। এক দশক ধরে মাটিখেকোদের থাবায় প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার বেশির ভাগ বসতভিটা ও ফসলি জমি পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। আইনের তোয়াক্কা না করে মাটিখেকোদের খননযন্ত্র পৌঁছে গেছে পদ্মা রেলপথের খুব কাছে। খুঁটির দুই পাশে ২০-৩০ ফুট গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পদ্মা সেতু ঘিরে চলছে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণকাজ। বিভিন্ন এলাকায় এর নির্মাণশৈলীও দৃষ্টি কাড়ছে। এমন সুখবরের মধ্যেই কেরানীগঞ্জ অংশে প্রায় চার কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পারে বন্যাপ্রবণ কোণ্ডা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে রেলপথের উভয় প্রান্তে মাটি সরিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। উভয় দিক থেকে গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় রেলপথটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে ঢাকা-মাওয়া রেলপথটি পড়েছে কেরানীগঞ্জের কান্দাপাড়া গ্রামে। নদীর কোলঘেঁষা এলাকাটি নিচু হওয়ায় রেলপথ বানানো হয়েছে পিলার দিয়ে মাটি থেকে কিছুটা ওপরে। কান্দাপাড়ার অদূরেই ব্রাহ্মণপাড়া গ্রাম। ব্রাহ্মণপাড়া স্কুল পেরিয়ে মসজিদের ঢাল হয়ে একটু এগোলেই বড় বড় খাদ। খাদগুলো ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর। মাটিদস্যুদের খননযন্ত্র পৌঁছে গেছে রেলপথের ৫০ গজের মধ্যে। রেলপথের অন্য প্রান্তেও দেখা গেছে একই চিত্র। এভাবে দুই ধারের মাটি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা কান্দাপাড়া থেকে সিরাজদিখানের সীমানা পর্যন্ত।

জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলপথের পাশ থেকে মাটি কেটে নিলে অবশ্যই ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমরা এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। কারা এটি করছে অবশ্যই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পদ্মা সেতু ঘিরে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ চলছে। ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ রেলপথটি ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আগামী জুনে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে রেল চলাচল শুরুর কথাও বলছেন রেলমন্ত্রী। এ অবস্থায় রেলপথের কাছাকাছি খনন চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক (পিবিআরএলপি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, রেলপথটি টেকসই করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবু কেউ যদি খুঁটির একেবারে কাছাকাছি থেকে মাটি খনন করে সেটি চিন্তার বিষয়। আমরা সরেজমিনে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, মাটিখেকোরা কাউকে তোয়াক্কা করে না। তারা প্রকাশ্যেই অন্যের জমি থেকে মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা রেলপথের উভয় পাশে মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কোণ্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক দশক ধরে দিন-রাত সমান তালে মাটি লুট করে সংঘবদ্ধ চক্রটি। ফলে এখানে আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের হুমকি-ধমকিতে অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। নিঃস্ব হলেও মাটিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার সাহস নেই ভুক্তভোগীদের। এই পরিস্থিতিতেও গত তিন বছরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ২০টির বেশি জিডি করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রা বলছেন, সব জেনেও নির্লিপ্ত স্থানীয় প্রশাসন। পুরো এলাকা বিরানভূমি হয়ে পড়ায় পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, পরিবেশ আইনে কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি নিজের মালিকানাধীন কৃষিজমি থেকে মাটি কাটতে চায়, তারও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে মাটি কাটার ঘটনা পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এ জন্য আমরা ইটভাটা বন্ধের দিকে জোর দিচ্ছি। কেরানীগঞ্জে কৃষিজমির মাটি লুটের ঘটনা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, অন্যের জমিতে মাটি কাটা এমনিতেই অপরাধ। সেটি যদি ফসলি জমি হয়ে থাকে, তা আরো বড় দণ্ডনীয় অপরাধ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদের প্রতি জোর দিচ্ছেন, সেখানে কেরানীগঞ্জের উর্বর জমি লুট করে নেওয়ার ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। আমরা অবশ্যই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।

বুড়িগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষা সাত হাজার বর্গকিলোমিটারের এই ইউনিয়নে প্রধান সমস্যা এখন মাটিদস্যুতা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পার হলে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ মোড়। এখান থেকে একটু বাঁ দিকে এগিয়ে কোণ্ডায় ঢুকলেই মনে হবে সমতল ভূমি কিংবা কৃষিজমি আর বাকি নেই। ফসলি জমি, বসতভিটা হয়ে গেছে পুকুর, ডোবা কিংবা বড় আকৃতির দিঘি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রাহ্মণগাঁও, নোয়ার্দা ও কান্দাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, রেললাইনের খুব কাছে চলে গেছে সন্ত্রাসীদের খননযন্ত্র। রেললাইনের খুব কাছে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীরতার খানাখন্দ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য বসতভিটা ও স্থাপনাও ঝুঁকিতে রয়েছে। পারজোয়ার ব্রাহ্মণগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি পাঁচতলা ভবনসহ ছয়টি ভবনেরও খুব কাছাকাছি মাটি কাটার ঘটনা ঘটছে।

বছরে অর্ধশত কোটি টাকার মাটি লুট : বর্তমানে কান্দাপাড়া, ব্রাহ্মণগাঁও, পূর্ব বাঘৈর, বীর বাঘৈর ও আড়াকুলএই পাঁচটি স্পট থেকে মাটি চুরি হচ্ছে। মাটি কাটা হচ্ছে ১০ থেকে ১২টি এক্সকাভেটরে। মাটি সরবরাহে চলাচল করছে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাক্টর ও মিনি ডাম্পার। এখান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার গাড়ি মাটি যায়। এ মাটির মূল গন্তব্য স্থানীয় ইটভাটা। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং জমি ভরাটেও লাগে মাটি। এক গাড়ি মাটির দাম ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসাবে পাঁচটি স্পট থেকে দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাটি চুরি হচ্ছে, বছরের হিসাবে যা অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।

স্থানীয়দের দাবি, গত ১০ বছরে কোণ্ডাসহ এর আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার মাটি লুট হয়ে গেছে। বীর বাঘৈর এলাকার একটি স্পট থেকে লুট করা মাটি সরবরাহের সময় একটি ট্রাক্টরের পিছু নিয়ে খোঁজ মিলল একটি ইটভাটার। মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মোখলেস। সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে সদ্য কেটে আনা মাটি।

ব্রাহ্মণগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রেললাইন থেকে মাত্র ৫০ গজের মধ্যেই বেশ গভীর করে মাটি কেটে নিয়েছে চক্রটি। সমতল ভূমি থেকে অন্তত ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে, যা রেললাইনটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্য : এলাকাবাসী বলছেন, সব জেনেও কেউ ভয়ে থানায় যায় না। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকর্মীদের সরেজমিন উপস্থিতি টের পেয়ে প্রায় সব স্থান থেকেই লুটেরারা সটকে পড়ে। আগের দিন কাউটাইলে দেখা গিয়েছিল মাটি লুটের দৃশ্য।

স্থানীয় এক চা দোকানি কথায় কথায় বলেন, সুজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই উত্তর পাবেন। তাঁর খবর দিতে পারবে তাঁর ভাতিজা রবিন। একটু খুঁজতেই পাওয়া গেল রবিনকে। তাঁর কথায়ও বোঝা গেল মাটি লুটের সঙ্গে সুজন জড়িত!

অনুসন্ধানে মেলে আরো অনেক নাম। একজনের নেতৃত্বে কাজ করে ১০ থেকে ১৫ জন। এমন চক্রের মূল হোতা হিসেবে পাঁচজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদেরই একজন কাউটাইল মৌজার সুজন মিয়া ওরফে সুজন মাঝি। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করছেন সাদ্দাম, মামুন, কামাল মেম্বার, কাশেম বেপারীসহ বেশ কয়েকজন। সুজন একই সঙ্গে ব্রাহ্মণগাঁও এলাকাও নিয়ন্ত্রণ করেন। ওখানে তাঁর নেতৃত্বে আছেন বাবু, শহীদ, পারভেজ। পূর্ব বাঘৈরে জাফর ইকবাল বাপ্পীর নেতৃত্বে আছেন জুয়েল আহাম্মেদ ডন, কাওছার, পলাশ, মোয়াজ্জেম, বাবু, রাহাত, আবজাল সিকদার, মাসুম। বীর বাঘৈরে রোমান আহমেদের নেতৃত্বে চলেন অন্তর, হিমেল ও ভেলু। আড়াকুলে সোহাগ মিয়ার নেতৃত্বে আছেন পারভেজ, টিক্কা মিয়া, জয়নালসহ অনেকে। চক্রের আরেকজন হোতা জরিপ উদ্দিন।

গত ২ ডিসেম্বর আড়াকুলে গিয়ে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা জমির মাটি উধাও। একটি এক্সকাভেটর পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, আগের দিন মাটি চুরির সময় জমির মালিক বাধা দেওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাই আপাতত মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা আঙুল উঁচিয়ে পাশের একটি তিনতলা ভবন দেখিয়ে বলেন, মানুষের জমি থেকে মাটি চুরি করে এই দালান তুলেছেন সোহাগ মিয়া।

বীর বাঘৈর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি এক্সকাভেটর দিয়ে নদীর পাশের মাটি কাটা চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন এখানে মাটি কাটা চলে। কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলে সাংবাদিক বুঝেই সটকে পড়েন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

৩ ডিসেম্বর দুপুরে পূর্ব বীর বাঘৈরেও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সটকে পড়েন মাটিদস্যুরা। দেখা যায়, দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছিল। রাখা ছিল মাটিভর্তি চারটি গাড়ি। পাশেই ঘুমাচ্ছিলেন মনির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তি। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক। ১০ মিটার দূরে ৩ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। এখানকার মাটি দিয়ে তাঁর জমিটিও ভরাট করা হচ্ছিল। মনির জানান, তাঁর জমি ভরাটের জন্য ৬৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেছেন মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। কাজটি দেখাশোনা করছেন ডন, পলাশ ও কাউসার।

নিঃস্ব, উদ্বাস্তু অনেক মানুষ : আড়াকুলের নোয়ার্দা এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা গ্রামের পাশ দিয়ে গেছে। এর দুই পাশের মাটি লুট চলছেই। এর আগে লুট হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমির মাটি। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।

পূর্ব বীর বাঘৈরের ভুক্তভোগী হাওয়া বেগম বড় আকৃতির এক গর্ত দেখিয়ে বলেন, ওইখানে আমার স্বামীর বাড়ি ছিল। মাটিদস্যুরা আমাদের উচ্ছেদ করে মাটি নিয়ে গেছে। এখন বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন ওরা মাটি কাটতে কাটতে এই বাড়ির পাশে চলে এসেছে। জানি না, এখানে কত দিন টিকতে পারব।

হাওয়া বেগমের বড় ভাই তসলিমও (৫৯) জানান একই কথা। তিনি বলেন, মাটিদস্যুদের কারণে বহু মানুষকে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারাতে হয়েছে। বিভিন্ন ইটভাটায় এই মাটি সরবরাহ করা হয়।

ব্রাহ্মণগাঁও গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির অবস্থা সবচেয়ে করুণ। যত্রতত্র মাটি লুটের দৃশ্য। মসজিদের পাশে বিলটির যেন অস্তিত্বই নেই। আছে বিশাল আকৃতির চারটি গর্ত। গভীরতা হবে ৫০ থেকে ৬০ ফুট। আর একেকটির আয়তন হবে কমপক্ষে ২০ হাজার বর্গফুট। মাটি লুট করতে গিয়ে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে রেললাইনটিও। পাশে স্কুল ভবনও ঝুঁকিতে।

স্থানীয় এক গৃহবধূ (নাম প্রকাশ করতে চাননি) সাংবাদিকদের একটি গর্তের পাশে নিয়ে গিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বিলাপ শুরু করেন। তিনি বলেন, এখানে তাঁদের বসতভিটা ছিল। কিছু জমিতে চাষাবাদও করতেন। কয়েক মাস আগে দস্যুরা মাটি কেটে এতটাই গভীর করেছে যে ভরাট করাও দুঃসাধ্য। অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে তাঁর উদ্বাস্তুজীবন কাটছে। তিনি বলেন, মাটি লুটেরারা এতটাই শক্তিশালী যে থানায় গেলেও কোনো প্রতিকার মেলে না।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক সাইনবোর্ড পড়ে রয়েছে। একটি সাইনবোর্ডে লেখাএই জমির মালিক ড. মো. হুমায়ুন কবির, জমির পরিমাণ ৪.৫ শতাংশ। সাইনবোর্ডে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে কল দিলে কথা হয় হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। সাইনবোর্ড ভেঙে পড়ে রয়েছেএ খবর শুনেই বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। পেশায় চিকিৎসক হুমায়ুন জানান, কয়েক মাস আগে সাড়ে ৪ শতাংশ জমিটি কিনে বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মানুষের জমি থেকে মাটি লুট হয় বলে এলাকায় সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাতারাতি তাঁর জমির মাটিও যে লুট হয়ে গেছে, সে খবর জানতেন না।

প্রশাসনের ভাষ্য: কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, শুনেছি যে সেখানে কিছু ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মাটি লুটের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি জানান, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফসলি জমির মাটি কাটার কোনো নিয়ম নেই।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, ওসব এলাকায় এর আগেও মাটি কাটার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন ব্যবস্থাও নিয়েছে। এবার কেউ অভিযোগ দেয়নি। আমরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেব।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমানও বলেন, এর আগেও মাটি লুটের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভূমি অফিস থেকে কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে আমরা তাঁদের সহযোগিতা করে থাকি। তবে সম্প্রতি কেউ মাটি লুটের বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। তবু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।


আরও খবর



মাথাপিছু ঋণ বেড়ে দেড় লাখ টাকা: সিপিডি

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক

Image

গত তিন বছরে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, তিন বছর আগে মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখ টাকা। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে, ফলে বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার মতোই বিপজ্জনক পথে আছে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য; মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেছেন, আশির দশকে অনেক আফ্রিকান ও লাতিন আমেরিকান দেশ স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছিল। সম্প্রতি এর বড় উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে, শ্রীলঙ্কার মতোই বিপজ্জনক পথে আছে এ দেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঋণের বড় বাধা এখন ঋণগুলোর শর্ত এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন।

আমরা যদি আশির দশকে ওপেকের সময় ঋণের সংকটের দিকে তাকাই, সেখানে দুটি পরিস্থিতি ছিল। একটি, লাতিন আমেরিকায় খুব বেশি ঋণ নিয়ে বিপদে পড়া। তারা বিপদে পড়েছিল স্বল্পমেয়াদি ঋণে, সেগুলো তাদের খুব সস্তায় দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা একসময় গিয়ে ঋণসংকটে পড়েছিল। একই ঘটনা শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকটের। শ্রীলঙ্কার অনেক ঋণ স্বল্পমেয়াদি। শ্রীলঙ্কার একই সময় অনেক আফ্রিকান দেশেও একই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

ড. রেহমান সোবহান বলেন, একইভাবে বাংলাদেশও স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে সংকটের পথেই আছে। এটা খুবই উল্লেখ করার মতো, এ ধরনের ঋণ এখন বাড়ছে। যেহেতু আমাদের রপ্তানি আফ্রিকার অনেক দেশের চেয়ে ভালো, তাই এ জায়গায় তেমন সংকট নেই।’

মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমাদের বিদেশি ঋণ ছিল সহনীয় পর্যায়ে। আমরা এখন যদি সতর্ক না হই, তাহলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে সরকার যে সতর্ক তা আইএমএফের কাছে ৪.৭ বিলিয়নের জন্য যে গেল সেটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।’

প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না, ১৯৮০ সালের দিকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো বিদেশি ঋণ নিয়ে এ ধরনের বড় সমস্যায় পড়েছিল। সাম্প্রতিক ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়া গ্রিস বড় উদাহরণ। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও ঘানার মতো দেশের উদাহরণ তো আছেই।’

আন্তর্জাতিকভাবে এ প্রভাব পড়ার বৈশ্বিক কারণগুলো হলো—কভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্বে মালামাল ও সেবার চাহিদা কমে যাওয়া। দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ কারণ—ঋণ ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল, অনেক দেশ অদূরদর্শী ঋণ নিয়েছে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন শর্তে ঋণ নেওয়া হয়েছে, মুদ্রার ওঠানামাও অনেক দেশে হয়েছে। এসব কারণ অভ্যন্তরীণ।’

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, জাতিসংঘের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত ও বেশি বিদেশি ঋণ নিয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশেই এ কারণে তা উদ্বেগের কারণ হয়েছে। ঋণের চাপে অনেকে আছে, অনেকে খেলাপি হয়েছে।

উন্নয়নশীল এসব দেশের সরকারি ঋণ ২০১০ সালে জিডিপির তুলনায় ৩৫ শতাংশ ছিল, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে। এর মধ্যে একই সময় দেশগুলোর বিদেশি ঋণ ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। এসব বিদেশি ঋণের মধ্যে ব্যক্তি খাতের ঋণও একইভাবে বেড়েছে। একই সময় ব্যক্তি খাতের ঋণ ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬২ শতাংশ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণার একটি অংশ তুলে ধরে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ১০৯ শতাংশ, যেটি দেশগুলোর জিডিপির ৩৩ শতাংশ। পাবলিক অ্যান্ড পাবলিকলি গ্যারান্টেড (পিপিজি) ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

আইএমএফের সতর্কবাণী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফ এসব দেশকে সতর্ক করে একটি প্রতিবেদন বানিয়েছে। আমরা কি আরেকটি ঋণ সংকটের দিকে যাচ্ছি?

তার মতে, বাংলাদেশের ঋণ ও পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাড়ছে, যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা পাকলিক ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য ঋণ নিচ্ছি। তাই দ্রুত অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

সিপিডি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮.৯ বিলিয়ন ডলার, যা একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডি জানিয়েছে, ঋণ পোর্টফোলিওর গঠন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। রেয়াতি ঋণের অনুপাত কমছে, অন্যদিকে রেয়াতি ও বাজারভিত্তিক ঋণের অংশ বাড়ছে। ঋণের শর্তাবলিও আরো কঠোর হচ্ছে।

বিশেষ করে জিডিপি, রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতা দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এর সঙ্গে ঋণ বহনের সক্ষমতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা উদ্বেগ তৈরি করেছে। দিন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় ঋণ পরিশোধের জন্য বিবেচনা করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ দেশি ও বিদেশি ঋণের মূল ও সুদ পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মেগাপ্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থপাচারের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বড় আকারের অনেক প্রকল্পই অতিমূল্যায়িত করে খরচ বাড়ানো হয়েছে। আবার প্রকল্পের ভেতরে বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোনো না কোনো স্বার্থগোষ্ঠীকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অন্যান্য দেশে জনগণের প্রাথমিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুঁজি গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে জনসাধারণের টাকা লুটের মাধ্যমে পুঁজি গড়ে উঠেছে। বিদেশি ঋণ নেওয়া প্রকল্পগুলোর মাধ্যমেও ব্যক্তি খাতে পুঁজি গড়ে উঠেছে। এটা বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের জন্যই প্রযোজ্য।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পুঁজি সঞ্চয়কারী অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। এর ফলে রাজনৈতিক নেতারা যে আশায় এই প্রকল্পগুলো নিয়েছিলেন, সেটায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশি-বিদেশি ঋণ থেকে সরকারের দায় বৃদ্ধির প্রবণতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের মাথাপিছু বিদেশি ঋণ তিন হাজার ১০ ডলার। আর অভ্যন্তরীণ উৎসর ঋণ মিলে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়ায় আট হাজার ৫০ ডলারে। স্বাধীনতার এত বছর পরে সরকারের মাথাপিছু ঋণ এক লাখ টাকায় উঠেছিল অথচ তা পরের তিন বছরেই দেড়গুণ হয়ে গেছে।

কভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে ঋণ বেড়েছে বলে অনেকে দাবি করলেও প্রকৃত কারণ ভিন্ন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ঋণ পরিশোধের চাপের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ সালেও সরকারের আদায় হওয়া রাজস্বের ২৬ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হতো। অথচ এই হার এখন ৩৪ শতাংশে উঠেছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ ঋণ যাচ্ছে ২৮ শতাংশ আর বিদেশি ঋণ সাড়ে ৫ শতাংশ।

বিদেশি ঋণ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে অনেকেই দাবি করলেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মোডি বা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস হিসেবে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং কমছে বলে দাবি করেন ড. দেবপ্রিয়। সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিরতাসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক ফলাফলের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ ঋণে নেওয়া মেগাপ্রকল্প প্রকৃত সুফল দিতে পারছে না বলে তিনি মন্তব্য করে বলেন, বিনিয়োগ না বাড়লে প্রকল্পের ফলাফল পাওয়া যাবে না।

ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৩.৪ থেকে ২৩.৮ শতাংশে আটকে আছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। গত দেড় দশকের সাফল্য কেন বিনিয়োগে প্রতিফলিত হয়নি? এফডিআই কেন জিডিপির ১ শতাংশে আটকে আছে? প্রশ্ন রেখে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০২৩ সালের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাতে সরকারের হিসেবেই কমেছে। এ ছাড়া শিক্ষা, ট্রেনিং বা কর্মে নেই এমন মানুষের হার বেড়েছে, বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাহীন পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে। ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঋণ করে চলে।

বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করতে গিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি হয়েছে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, শিক্ষায় গত ১৫ বছরে কোনোভাবেই জিডিপির ২ শতাংশের বেশি এবং স্বাস্থ্যে ১ শতাংশের বেশি বরাদ্দ হয়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অবহেলার প্রতিফলন এই এসভিআরএস প্রতিবেদনেও এসেছে বলে তিনি জানান। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যথাযথ কাজ করছে না বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য তিন মাস পর আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কেবিনেটের সাব কমিটি ক্রয় কমিটিতে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


আরও খবর



ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

হামাসের জ্যেষ্ঠ এক রাজনীতিক মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, তারা ইসরাইলের সঙ্গে পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতিতে রাজি। ১৯৬৭-পূর্ব সীমান্ত অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বশস্ত্র গোষ্ঠীটি নিরস্ত্রীকরণ করবে এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে রূপান্তরিত হবে। খবর সিএনএনের

কয়েক মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই বুধবার এক সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া এসব বলেন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। দেশটি হামাসকে শেষ করে দিতে শপথবদ্ধ। আর দেশটির বর্তমান নেতৃত্ব ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধী।

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল-হাইয়া যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইস্তানবুলে এপির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আল-হাইয়া বলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনে প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ গ্রুপের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন লিবারেশন অরগানাইজেশনের (পিএলও) সঙ্গে যোগ দিতে চায় হামাস।

তিনি বলেন, হামাস পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা মিলে একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং ইসরাইলের ১৯৬৭-পূর্ব সীমান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রেজল্যুশনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন হামাস মেনে নেবে।

আল-হাইয়া আরো বলেন, যদি তা হয়, তবে তাদের সামরিক শাখা বিলুপ্ত হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা, অধিকার ও রাষ্ট্র পেয়ে গেলে দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করা গোষ্ঠীটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হবে। তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী জাতীয় সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হবে।


আরও খবর



হজের ভিসা আবেদনের সময় বাড়ল

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

হজের ভিসার আবেদনের সময় বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। চলতি বছর হজে যেতে চূড়ান্ত নিবন্ধনকারী আগামী ৭ মে পর্যন্ত হজ ভিসার আবেদন করতে পারবেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম।

তিনি জানান, ধর্মমন্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি হাজিদের জন্য হজের ভিসা আবেদনের সময় ২৯ এপ্রিল থেকে আগামী ৭ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এসময়ের মধ্যে সবাইকে ভিসা আবেদন করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, হজের ভিসা আবেদনের সময় আরও বাড়ানোর জন্য আমারা আবেদন করেছিলাম। সময় বেড়েছে। কিন্তু আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি।

আগামী ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। ৮ মে চলতি বছরের হজে আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


আরও খবর



ইরাকে সমকামী সম্পর্কে জড়ালেই ১৫ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

সমকামী সম্পর্কে জড়ালে হবে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড। এমনই এক আইন পাশ হয়ে গেল ইরাকের পার্লামেন্টে। দেশটির সরকারের দাবি, ধর্মীয় মূল্যবোধকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এই নতুন আইন পাশ করা হলো।

ইরাকে আগে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো ও আমেরিকার বিরোধিতায় সর্বোচ্চ সাজা ১৫ বছরের কারাদণ্ডই রাখা হয়েছে। কেবল সমকামী সম্পর্ক নয়, আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে রূপান্তরকামীদের জন্যও। বলা হয়েছে, লিঙ্গ বদলকারী কিংবা নারীদের বেশ ধারণকারীদের এক থেকে তিন বছরের কারাবাস বা ৭৭০০ ইউরো জরিমানা হবে।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইরাকের সমাজকে নৈতিক অবক্ষয় ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া সমকামিতা থেকে রক্ষা করতেই এই আইন আনা হয়েছে। সমকামিতা ও দেহব্যবসা রুখতে আনা এই আইনে জানানো হয়েছে, কেউ সমকামী সম্পর্কে জড়ালে সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বনিম্ন ১০ বছরের সাজা হবে তার। সমকামিতা কিংবা দেহ ব্যবসার প্রচার করলে কমপক্ষে ৭ বছরের জন্য যেতে হবে কারাগারে।

এতদিন পর্যন্ত ইরাকের আইনে সমকামিতাকে অপরাধ বলা হয়নি। কেবলমাত্র দণ্ডবিধির উল্লেখে অল্প করে নৈতিকতার দিকটি আনা হয়েছিল। সেটাকেই অস্ত্র করে এলজিবিটি মানুষদের আক্রমণ করত সশস্ত্র দলগুলো। এবার সমকামিতাকে অপরাধ ঘোষণা করে শাস্তির বিধান দিল নতুন আইন।


আরও খবর



বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৬৫তম বাংলাদেশ

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে ২ ধাপ পিছিয়ে ১৬৫তম অবস্থানে বাংলাদেশ। এ বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) শুক্রবার (৩ মে) এই সূচক প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ৭৪তম অবস্থান দখল করেছে। এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১০৬তম অবস্থানে। এবারের তালিকায় প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে তৃতীয় স্থান পেয়েছে ভুটান। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পেছনে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম।

গত বছরের ১৬১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার ১৫৯তম অবস্থান পেয়েছে ভারত। আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ স্থান পেয়েছে। ২৬ ধাপ পিছিয়ে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৮তম, পয়েন্ট মাত্র ১৯ দশমিক ০৯।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদনে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেয়া হয়। এগুলো হলো-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক সূচকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে নিশ্চিত হয়েছে। এ বছর এই সূচকের বৈশ্বিক গড় সাত দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে।


আরও খবর