২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময়সীমা শেষ হলেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারেনি বরিশালে জিপিএ-৫
পাওয়া ৫৫১ শিক্ষার্থী। তারাসহ প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এখন এনালগ পদ্ধতিতে কলেজে
ভর্তির অপেক্ষায় আছে। তবে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন আসন খালি আছে প্রায় ৩০ হাজার।
এনালগ পদ্ধতি
বলতে বোঝানো হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতি শেষে কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি
সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে নামি কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য সুপারিশের প্রয়োজন হয় বলে জানা
গেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল
শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘বোর্ডের অধীনে কলেজগুলোতে প্রায় এক লাখ
আসন রয়েছে। যার বিপরীতে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৭২ শিক্ষার্থী।
হিসাবে প্রায় ৩০ হাজার আসন এখনও খালি। তবে আসন এক লাখ থাকলেও এবার বোর্ডে এসএসসি পাস
করেছে ৯৪ হাজার ৮৭১ জন। অর্থাৎ পাস করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে আমাদের আসন বেশি। তাই আসন
পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই শিক্ষার্থীদের।’
উদ্বেগের বিষয়
হলো জিপিএ-৫ পাওয়া ৫৫১ শিক্ষার্থী এখনও কোনও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি উল্লেখ করে ড.
মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘এ কারণে গতবারও
পাঁচ ধাপে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। হয়তো এবারও সেই পথে হাঁটতে হবে। সেক্ষেত্রে
সভা হবে। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বছর বরিশাল
জিলা স্কুল থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া নাবিল রহমান আলভির বাবা আনিসুর রহমান বলেন,
‘আমার ছেলের পছন্দ ছিল সরকারি সৈয়দ হাতেম
আলী কলেজ। ওই কলেজ পাওয়ার জন্য তিনবার আবেদন করেছিল। কিন্তু পছন্দের কলেজ না পাওয়ায়
এখন এনালগ পদ্ধতির জন্য অপেক্ষা করছে।’
আনিসুর রহমান
বলেন, ‘বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন যারা জিপিএ-৫
পেয়েছে তারা পছন্দের প্রথম কলেজ পাওয়ার দাবিদার। সেখানে সাড়ে ৫০০ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী
পছন্দের কলেজ না পেয়ে এখন এনালগ পদ্ধতির অপেক্ষায় রয়েছে।’
এনালগ পদ্ধতিতে
যদি পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া যায়, তাহলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেন ভর্তি হওয়া যাবে না
প্রশ্ন রাখেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এতে মেধাবীদের মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মনে
প্রশ্ন জেগেছে, আর কত ভালো ফল করলে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবো।’
শুধু আনিসুর রহমানের
ছেলে নয়, পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডের অধীন ছয় জেলার প্রায় ২৮ হাজার
শিক্ষার্থী এনালগ পদ্ধতিতে ভর্তির অপেক্ষায় আছে। তারা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর
সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, কবে এনালগ পদ্ধতির ঘোষণা আসবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। কারণ, ভালো ফল করার পরও তারা বলতে পারছে
না কোথায় ভর্তি হচ্ছে। আবার একই সমস্যায় পড়েছে অন্যান্য শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ
শিক্ষক সমিতির বিভাগীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের একাধিক
কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে জানিয়েছেন, ১ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে
শিক্ষার্থীদের পছন্দের কলেজ বণ্টনের চতুর্থ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, ওই তালিকায় জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ পেয়ে যাবে।’
এটি কোনও সিস্টেমের
মধ্যে পড়ে না জানিয়ে এই শিক্ষক নেতা আরও বলেন, ‘মেধাবীদের অগ্রাধিকার দিয়ে পছন্দের কলেজ দিতে হবে। তা না
হলে তারা কোনোভাবেই নিশ্চয়ন করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে এখনও সাড়ে ৫০০ জিপিএ-৫
পাওয়া শিক্ষার্থীসহ ২৮ হাজার ভর্তি হয়নি। তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা
কোনও কলেজ পায়নি।’
মহসিন উল ইসলাম
হাবুল বলেন, ‘কোন পদ্ধতিতে
শিক্ষার্থীদের কলেজ দেওয়া হচ্ছে, তা আমার জানা নেই। আমি যখন বিষয়টি জানি না তখন অভিভাবক
ও শিক্ষার্থীরাও জানে বলে মনে হয় না। আসলে বিষয়টি পরিষ্কার করে জানানো উচিত। ভর্তি
সহজ করতে ডিজিটাল করা হলো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় আছে এনালগ পদ্ধতিতে ভর্তি
হওয়ার জন্য। তাহলে ডিজিটাল করে লাভ কি হলো?’
এবার বরিশাল শিক্ষা
বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৬৮ জন। পাস করেছিল ৯৪ হাজার ৮৭১ শিক্ষার্থী।